নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে পথে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা ভেবেছিলেন, দেশ এখন তার বিপরীতে চলছে বলে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রেড রোডে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নেতাজি দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে যা বলে গিয়েছিলেন, তা মানলে ভারতবর্ষ আরও বড় দেশ, উন্নত দেশ হিসাবে বিশ্ববিশ্রুত হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। নেতাজির মতো আর একজন নেতা পাওয়া যায়নি তা এদেশের দুর্ভাগ্য।
মঙ্গলবার, নেতাজির জন্মবার্ষিকীতে রেড রোডে নেতাজি মূর্তিতে মাল্যদান ও সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হয় রাজ্য সরকারের তরফে। সেখানে প্রতিবারই নিজে উপস্থিত থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও ছিলেন। আর সেখান থেকেই দেশনায়ককে নিয়ে কেন্দ্রের উদাসীনতাকে তোপ দাগলেন তিনি। নীতি আয়োগকেও দুষলেন। তাঁর কথায়, ‘আগে প্ল্যানিং কমিশন ছিল। সেখানে ভালো কাজ হতো। কিন্তু এখন হয়েছে নীতি আয়োগ। যার কোনও নীতি নেই, আয়োগ নেই। মোমের পুতুলের মতো।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যিনি সব ধর্মের সব সম্প্রদায়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলতে পারবেন তিনিই দেশের নেতা হতে পারেন। অন্যদিকে, প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও কেন্দ্রের সরকার নেতাজির অন্তর্ধান সংক্রান্ত ফাইল প্রকাশ্যে আনেনি বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নেতাজি কোথায় হারিয়ে গেলেন নেতাজি তা জানা গেল না। বললেন, ‘আমরা নেতাজির মৃত্যুদিনটাও জানতে পারলাম না। ওরা বলেছিল, ছাই নিয়ে যেতে। আমি বলেছি, ছাই নেব না, আমাদের জীবন্ত নেতাজি চাই।’ রাজ্য সরকারের কাছে নেতাজির তথ্য সম্বলিত ৬৪ টি ফাইল প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দেওয়া স্বত্বেও কেন্দ্র তা প্রকাশ করেনি।
নেতাজি জয়ন্তি উপলক্ষে রাজ্য সরকারের তরফে মঙ্গলবার এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, অরূপ বিশ্বাস, ব্রাত্য বসু, ফিরহাদ হাকিম প্রমুখ। অধ্যাপক সুগত বসু-সহ নেতাজির পরিবারের সদস্যরাও এদিন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, রাজ্যসঙ্গীতের মাধ্যমে এদিন অনুষ্ঠান শুরু হয়। ১৯৪৩ সালে নেতাজি ফেরার পর বাংলার মানুষ তাকে যে গানে বরণ করে নিয়েছিলেন সেই ‘সুভাষ জি’ গানটিও পরিবেশিত হয়। এরপর ন্যাশনাল আর্মির মার্চ সং উপস্থাপিত করার জন্য ঘোষণা করেন ইন্দ্রনীল সেন। সবশেষে পরিবেশিত হয় ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ গানটি। কণ্ঠ মেলান স্বয়ং মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।
অধ্যাপক সুগত বসু এদিন সুভাষচন্দ্র বসুর কথা স্মরণ করে দেশের সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরেন। ২৩ জানুয়ারি প্রত্যেক বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে আমন্ত্রণ জানান বলে এদিন বলেন তিনি। পাশাপাশি জানান, নেতাজি ভবনে আজ ৯৫ বছর বয়সে এক বৃদ্ধা এসেছিলেন যিনি রানী অফ ঝাঁসি রেজিমেন্ট- এর ভেটের। এসেছিলেন ওমর হাবিব নামে এক গুজরাতি মুসলমান। তাঁর ঠাকুরদা আধুল হাবিব সাহেব আজাদ হিন্দ ফৌজকে তৎকালীন সময়ে রেঙ্গুনে এক কোটিরও বেশি টাকা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বাংলা থেকে দেশের জন্য একটা বার্তা দেওয়া দরকার তাই তিনি হিন্দি ভাষায় হিন্দু-মুসলমান ঐক্য আর সম্প্রীতির ওপর ভিত্তি করে একটি গান গেয়ে শোনান।