সুকান্তের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে বিএসএফকে হুঁশিয়ারি মমতার

কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে আরও একবার অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীর সাফ বক্তব্য, ‘বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসকে হারিয়ে বাংলায় জিততে পারে একমাত্র তৃণমূল।’ জেলা সফরে গিয়ে মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া, ইসলামপুরে পদযাত্রা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ঠিক একদিন আগে এই রুট দিয়েই গিয়েছে রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা। রাহুলের সঙ্গে কার্যত একই রুটে পদযাত্রা করলেও এদিন কংগ্রেস বা রাহুল নিয়ে সরাসরি কিছু বলেননি মমতা। জোট নিয়েও স্পষ্ট কোনও বার্তা দেননি। কিন্তু বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় তৃণমূল লড়বে একাই। নেত্রী এদিন বলেন, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসকে হারিয়ে বাংলায় জিতবে একমাত্র তৃণমূল।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বালুরঘাট আসনে বিজেপির জয়ের নেপথ্যে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর ভূমিকা ছিল বলে পরোক্ষে অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি কিছুটা হুঁশিয়ারির সুরেই মমতা বলে দিলেন, এবার তেমন হোক তা তিনি চান না। মঙ্গলবার রায়গঞ্জের সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি শেষ করে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেই মঞ্চ থেকেই তিনি বিএসএফের বিরুদ্ধে ভোটের লাইন ম্যানেজ করার অভিযোগ তোলেন।

মমতা বলেন, ‘আমার কাছে ইনফরমেশন (তথ্য) আছে। আগের বার বালুরঘাটে ভোটের লাইন করিয়েছিল বিএসএফ।’ মমতা আরও বলেন, ‘এ বার যদি শুনি…. মনে রাখবেন ইলেকশন চলে যাবে। আমরা কিন্তু থাকব। তখন কিন্তু সেই কথাটা আমারও মনে থাকবে।’ মমতার কথায়, ‘ভোট করায় নির্বাচন কমিশন, ডিএম (জেলাশাসক), এসপিরা (পুলিশ সুপাররা)। সেখানে ওরা (বিএসএফ) গিয়ে লাইন ম্যানেজ করে। কে দিয়েছে এই অধিকার?’

সোমবার কোচবিহারের সরকারি কর্মসূচি থেকেও বিএসএফের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকায় বিএসএফ আইডেন্টিটি কার্ড দিতে চাইছে।’ মানুষকে সাবধান করে মমতা বলেছিলেন, ‘আপনারা ওই কার্ড কেউ নেবেন না। তা হলে এনআরসির মধ্যে পড়ে যাবেন।’ বালুরঘাটের কর্মসূচি থেকেও মমতা একই কথা বলেছেন। পাশাপাশি দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসককে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, ‘যাঁরা এ পার থেকে ও পারে কাজে যান, তাঁদের পারমিট কার্ড আপনি দেবেন। বিএসএফের কার্ড নেওয়ার দরকার নেই।’

মঙ্গলবারের সরকারি সভা থেকে দক্ষিণ দিনাজপুরের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। যার অর্থমূল্য ২০০ কোটি টাকা। বালুরঘাট থেকেও ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, গ্রাম সড়ক যোজনায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে সরব হন মমতা। বালুরঘাটের সভা শেষ হতে প্রায় বিকেল গড়িয়ে গিয়েছিল। তাই মুখ্যমন্ত্রী ওই মঞ্চ থেকেই বুধবার বালুরঘাটের সব সরকারি ও সরকার পোষিত ßুñলে ছুটি ঘোষণা করে দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মাধ্যমিকের জন্য এমনিতেই বৃহস্পতিবার থেকে ছুটি পড়ার কথা ছিল। যে হেতু ছেলেমেয়েদের বাড়ি ফিরতে সন্ধে হয়ে যাবে, তাই কালকের দিনটাও ছুটি।’

নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে কড়া মুখ্যমন্ত্রী

নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে কড়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেউ জেনেশুনে ভুল করলে আইন আইনের পথে চলবে, রায়গঞ্জ থেকে কড়া বার্তা দিলেন তিনি। একইসঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচুর নিয়োগের আশ্বাসও দিলেন।

মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার রায়গঞ্জে পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেখান থেকেই নিয়োগ ক্ষেত্রে ‘ভুল ভ্রান্তি’ নিয়ে কড়া বার্তা তাঁর। বলেন, ‘স্কুলে অনেক নিয়োগ হবে। আপনারা আবেদন করুন। নিশ্চয়ই আপনারা পাবেন। এক আধজনের ছোট্ট একটা ভুলের জন্য।’ মমতা আরও বলেন, ‘মনে রাখবেন, একসাথে থাকতে হলে থালাবাটিতেও ঠোকাঠুকি লাগে। তার পর আবার ঠোকাঠুকি ঠিক হয়ে যায়। ঠোকাঠুকি যেটা হয় সেটা করে অজান্তে।’ এদিনের সভা থেকে বিজেপিকেও নিশানা করেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ‘মানুষ কী খাবে, কী পরবে তা একান্ত নিজস্ব পছন্দ। কিন্তু বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে মাছ-ডিম-মাংসের দোকান বন্ধ করে দিচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − seven =