০-১ পিছিয়ে পড়েও ৩-১ ব্যবধানে ডার্বি জয় ইস্টবেঙ্গলের

একতরফা জয় আর নয়! ইস্টবেঙ্গল শিবিরে যেন অলিখিত সতর্কবার্তা! এ মরসুমের আগে পরিস্থিতি তেমনই ছিল। টানা আটটা ডার্বি জিতেছিল মোহনবাগান। এ বারের ডুরান্ড কাপে গ্রুপ পর্বে ডার্বি জিতে টানা নবম হার বাঁচিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে সেই কার্লেস কুয়াদ্রাতের টিমকে হারিয়ে ট্রফি জেতে মোহনবাগান। কলিঙ্গ সুপার কাপের সূচি প্রকাশ থেকেই ডার্বির উত্তেজনা শুরু হতে থাকে। মরসুমের তৃতীয় ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের দ্বিতীয় জয়। ০-১ পিছিয়ে পড়েও ৩-১ ব্যবধানে ডার্বি জয় ইস্টবেঙ্গলের।

এ বারের সুপার কাপে আগের ম্যাচগুলোতে মোহনবাগান গোল খেয়ে প্রত্যাবর্তন করেছে। দুটো ম্যাচই জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। ডার্বিতে মোহনবাগান প্রথমে এগিয়ে যায়। ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিট এক তরফা দাপট ছিল মোহনবাগানের। ১৯ মিনিটেই ১-০ এগিয়ে যায় মোহনবাগান। কর্নার থেকে হেডে গোল করেন হেক্টর ইউস্তে। সমতা ফেরাতে খুব বেশি সময় নেয়নি ইস্টবেঙ্গলও। ২৪ মিনিটে জোরালো শটে গোল করেন ইস্টবেঙ্গল ক্যাপ্টেন ক্লেটন সিলভা। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সারা ম্যাচে বারবার চাপে ফেলেছেন সবুজ-মেরুনকে।

ডার্বিতে উত্তেজনা থাকবে, এমনটাই স্বাভাবিক। বেশ কিছু কার্ডও দেখাতে হল রেফারির। তবে উত্তেজনা বাড়ল প্রথমার্ধের অ্যাডেড টাইমে। কিয়ান নাসিরি লাগাতার প্রতিপক্ষ বক্সে সমস্যা তৈরি করছিলেন। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে কিয়ানের শট বাঁচানোর চেষ্টায় বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডার হিজাজির। পেনাল্টি দিতে দ্বিধা করেননি রেফারি ভেঙ্কটেশ। যদিও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ দিমিত্রি পেত্রাতোস।

দিমিত্রি পেত্রাতোস প্রথম পেনাল্টি নেওয়ার সময় আগেই মুভ করেন হুগো বোমাস। সঙ্গে ছিলেন রাজ বাসফোরও। সে কারণেই ফের কিক নিতে বলা হয়। কর্নার দিয়ে জালে বল ঢোকানোর পরিকল্পনা ছিল পেত্রাতোসের। কিন্তু এতটা কোনায় কিক মারেন যে তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে শট মেরেছিলেন আর্মান্দো সাদিকু। তাও বাইরে যায়। না হলে ২-১ এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে পারত মোহনবাগান।

ম্যাচের ৫৫ মিনিটে দশ জনে হয়ে যেতে পারত মোহনবাগান। সম্ভবত ডার্বির উন্মাদনা নষ্ট না করতেই রেফারি সংযত থাকেন। আগেই একটি হলুদ কার্ড দেখেছিলেন মোহনবাগানের তরুণ ডিফেন্ডার রাজ বাসফোর। সিভেরিওর সঙ্গে বল দখলের চেষ্টায় বুট অনেকটা তোলেন। রেফারি চাইলে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা রেড কার্ড দেখিয়ে তাঁকে বের করে দিতে পারতেন। রেফারি তা করেননি। রাজকে দ্রুতই তুলে নেন ক্লিফোর্ড মিরান্ডা। একই ধরনের ঘটনা গ্ল্যান মার্টিন্সের ক্ষেত্রেও। ৬০ মিনিটে সৌভিক চক্রবর্তীকে কড়া ট্যাকল করেন গ্ল্যান। দ্রুতই ক্ষমা চেয়ে নেন। রেফারি চাইলে দ্বিতীয় হলুদ তথা রেড কার্ডও দেখাতে পারতেন।

ভাগ্য অবশ্য ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গ দিল। প্রথমার্ধের অ্যাডেড টাইমে পেত্রাতোসের পেনাল্টি পোস্টে লাগে। ৬৩ মিনিটে লিড নেয় ইস্টবেঙ্গল। গোলকিপার প্রভসুখন গিলের লম্বা বল। রাজার বদলি হিসেবে নামা রবি রানার সামনে থেকে বল দখল বোরহার। তাঁর শট পোস্টে লাগে। ফিরতি বলে গোল নন্দকুমারের। ডুরান্ড কাপেও গ্রুপ পর্বের ডার্বিতে গোল করেছিলেন নন্দ। টানা আটটি হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ফের এক বার ডার্বিতে গোল নন্দকুমারের। স্কোরলাইন তখনও সুরক্ষিত মনে হচ্ছিল না। ম্যাচের ৮০ মিনিটে দলকে সেই সুরক্ষাই দিলেন ক্যাপ্টেন ক্লেটন সিলভা। হিজাজির হেড আটকাতে ব্যর্থ মোহনবাগান গোলরক্ষক আর্শ আনোয়ার। তাঁর হাত ফসকে বল বেরিয়ে যায়। ফিরতি বলে গোল ক্লেটনের। ম্যাচে তাঁর দ্বিতীয় গোল।

আট মিনিট অ্যাডেড টাইম দেওয়া হয়েছিল। যা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না ইস্টবেঙ্গল শিবির। তাতেও অবশ্য দাপট ছিল ইস্টবেঙ্গলেরই। স্কোর লাইন ৪-১ হতে পারত। পরিবর্ত হিসেবে নামা তরুণ ফুটবলার অজয় ছেত্রীর শট বাঁচান মোহনবাগান গোলরক্ষক আর্শ আনোয়ার। কলিঙ্গ সুপার কাপের সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গল। গ্রুপেই বিদায় মোহনবাগানের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − one =