কলকাতা : কিংবদন্তি ক্রীড়া প্রশাসক, প্রয়াত প্রদ্যোৎ কুমার দত্তের জৈষ্ঠ পুত্র, অনির্বাণ দত্ত। বর্তমানে জর্জ টেলিগ্রাফ গ্রুপ এর ট্রাস্টি ও ডিরেক্টর এবং জর্জ টেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাব এর যুগ্ম সচিব, যাকে ময়দানের সবাই জয় বলেই চেনে। ছোট বেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি টান ছিল চোখে পড়ার মতো। ময়দানের প্রতি এত টান থাকায় নিজেকে বাড়িতে আটকে রাখতে পারেননি। তাঁর বড় কারণ তাঁর বাবা শ্রদ্ধেয় প্রদ্যোৎ দত্ত। প্রদ্যোৎবাবু যখন বাংলার ফুটবল প্রশাসনে ছিলেন তখন বাড়িতে বিভিন্ন ক্লাবের তৎকালীন কর্তা ও ফুটবলারদের দৈনন্দিন যাতায়াত ছিল। ফলে ময়দানের একাধিক কর্তা ও ফুটবলারদের সঙ্গে অনির্বানের পরিচিতি হয়। তৎকালীন কর্তাদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন। মাঠের লোকের সঙ্গে তাঁর ভালবাসা,ভাল লাগা, একাত্ম হওয়া প্রদ্যোৎবাবুর সময় থেকেই। সবার ভালবাসাও পেতেন। যাঁরা তাঁদের বাড়িতে যেতেন তাঁরা প্রত্যেকেই অনির্বানকে তাঁর ডাক নাম ‘জয়’ বলেই ডাকতেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেই থেকেই ময়দানের কর্তা থেকে ফুটবলারদের কাছে ‘জয়’ নামটাই বেশি পরিচিত।
মাত্র ২০ বছর বয়সে জর্জ টেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাবের প্রশাসনে যোগ দিয়েছিলেন অনির্বান। পরে যত দিন গিয়েছে,ক্রীড়া প্রশাসক হিসেবে ততোই যেন দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। প্রয়াত পিতা প্রদ্যোৎ দত্তর মতোই পুত্র অনির্বান পরিশ্রমী, আপাৎমস্তক সৎ, সাহসী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পিছপা হন না। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বাংলার ফুটবলের উন্নয়নে তাঁর ভাবনা-চিন্তার গভীরতা প্রশংসনীয়। প্রদ্যোৎ দত্তর মতোই অনির্বানও বিশ্বাস করেন জেলা ফুটবলের উন্নয়ন না ঘটলে বাংলার সামগ্রিক ফুটবলের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কাজেই জেলা ফুটবলের তৃণমূল স্তর থেকে নজর দেওয়াটা জরুরি। বাঙালি ফুটবলারদের বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তার প্রমাণ জর্জ টেলিগ্রাফের ফুটবল দল গঠন। তাছাড়া,অনির্বান সব সময় ফুটবলারদের পাশে থেকেছেন একজন দাদার মতো হয়ে। যে কারণে জর্জে খেলে যাওয়া ফুটবলাররা এখনও তাঁদের “জয়দা”-র প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শুধু মাঠের লোকই নয়, জর্জ টেলিগ্রাফের কর্মীদের কাছেও অসম্ভব জনপ্রিয় মুখ হল এই অনির্বান দত্ত। কর্মীদের যে কোনো দরকার বা প্রয়োজন এ তার কেবিন এর দরজা সর্বদা খোলা। আর নিজের বুদ্ধিদীপ্তা, ব্যবহার ও কর্মক্ষমতার জোরে আদায় করে নিয়েছেন সবার ভালোবাসা ও সম্মান ।
৯৭ বছরের জর্জ টেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাব ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময় হল অনির্বান দত্তর জমানায়। ১৯৯৮ সালে প্রথম জর্জ টেলিগ্রাফের ফুটবল দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সেই বছরই জর্জকে প্রিমিয়ার ভিভিশনে তুলেছিলেন অনির্বান। জর্জ টেলিগ্রাফ কলকাতা ফুটবল লিগের শীর্ষ স্তরে ধারাবাহিকভাবে ভাল পারফরম্যান্স করে এসেছে। আর এই ভাল পারফরম্যান্সের কারণেই, অনির্বানের নেতৃত্বে জর্জ টেলিগ্রাফ যথাক্রমে ২০০৮-০৯ এবং ২০১২-১২ মরসুমে দ্বিতীয় ডিভিশন আই লিগে অংশগ্রহণ করেছিল।
শুধু তাই নয়, অনির্বান অর্থাৎ ময়দানের অতি পরিচিত জয়কে ব্রিটিশ কাউন্সিল নির্বাচিত করেছিল ‘কলকাতা গোলজ’ প্রকল্পর জন্য। তিনিই এই প্রকল্পর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতা পুলিশ, ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সহযোগিতায় এই ‘কলকাতা গোলজ’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এমনকি একটা সময়ে অনির্বান লন্ডনে গিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সাথে বৈঠক করে তিনি স্বতন্ত্রভাবে প্রকল্পটি পরিচালনার ব্যবস্থা করেছিলেন। জর্জ টেলিগ্রাফ ‘কলকাতা গোলজ কাপ’-এ দু- দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
ময়দানেরর ফুটবলার মহলে অনির্বান দত্ত খুব জনপ্রিয়। কারণ অনগ্রসর শ্রেণীর অনেক অল্পবয়সী ছেলেকে ফুটবলের মূল স্রোতে তুলে এনেছেন। ক্লাব পর্যায়ে সফল ভাবে কাজ করে চলেছেন। আবার আইএফএ-এর বিভিন্ন কমিটির সদস্য হয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। শুধু তাই নয়, রাজ্য ফুটবলের নিয়ামক সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ফিনান্স কমিটিতেও যোগ্যতার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে অনির্বানের। ক্লাব এবং বাংলার ফুটবলের স্বার্থে কমিটির সভায় অনির্বান সব সময় সোচ্চার হয়েছেন। তিনি এখনও বাংলার ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। অনির্বান বিশ্বাস করেন,সবাই এক হয়ে চেষ্টা করলে ভারতীয় ফুটবলে বাংলা আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। অসম্ভব বলে কিছু হতে পারে না। অসম্ভব মনের জোর,নিজের কাজের প্রতি বিশ্বাসই অন্যদেরও স্বপ্ন দেখাতে তৈরি অনির্বান দত্ত।