ছুটতে ছুটতে ট্রেন-বাস ধরা। অটোর জন্য লম্বা লাইন। করোনার জন্য নিত্য অফিস যাওয়ার দৌড়াদৌড়ি অনেকেরই বন্ধ হয়েছে। অফিস এখন বাড়িতেই।গত দুবছরে মানুষ অভ্যস্থ হয়ে উঠেছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এ।
এতে রোজের অফিস যাওয়ার হ্যাপা যেমন কমেছে, তেমনই পরিবারের মানুষগুলোর সঙ্গেও খাকা যাচ্ছে বাড়িতে।কিন্ত তা কি শুধুই ভাল?
ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এ ৮ ঘণ্টার ডিউটি অনেকেরই ১০-১২ ঘণ্টায় পৌঁছচ্ছে।খাওয়া-ঘুম, হাঁটাচলা সবই কমবেশি উল্টেপাল্টে যাচ্ছে। তারই ফলে, যে সমস্যাগুলো হচ্ছে…
১. ব্যাক পেন
২. চোখের সমস্যা
৩.হজমের গন্ডগোল
৪.মোটা হয়ে যাওয়া
৫. ঘুমের সমস্যা
৬. মানসিক অস্থিরতা
কেন হচ্ছে?
অফিসে বসার জায়গা, টেবিল সবই নির্দিষ্ট ছিল। কিন্তু বাড়িতে ল্যাপটপ। অনেকরই বসার জায়গা ও টেবিলের অ্যাডজাস্টমেন্ট ঠিক থাকছে না। ফলে দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে গিয়ে ঘাড়ে, কোমরে ব্যথা হচ্ছে।
অফিসে মিটিং হত একসঙ্গে সকলে বসে। এখন সেটা হয় কোনও না কোনও অ্যাপে। একে সারাদিন কাজ, তার ওপর মিটিং। সবইটা মোবাইল ফোন নয়তো কম্পিউটার নির্ভর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে বাড়ছে চোখের সমস্যা।
ঘরে বসে কাজ করার ফলে, হাঁটাচলা কমেছে। দৌড়াদড়ি করে ট্রেন, বাস ধরতে গেলেও শারীরিক পরিশ্রম হত। এখন ঘরে বসে কাজ আর তারই সঙ্গে চলছে বার্গার, পিত্জা, ঘন ঘন কফি।কখনও, আবার সময়ে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ হচ্ছে না।তারই প্রভাবে ওজন বাড়ার পাশাপাশি অনেকেরই হজমের সমস্যা হচ্ছে। শারীরিক পরিশ্রম একেবারেই না হওয়ায়, ঘুমও হচ্ছে না আগের মতো।
বাড়ি বসে কাজ করায় অনেকেই আবার অবসাদের শিকার হচ্ছেন।কারণ অফিস মানে, শুধু কাজ নয়। সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা, গল্প। কাজের ফাঁকে চা-সিগারেট খাওয়া।বাড়িতে সেই সুযোগ কই? তারওপর যাঁরা একা থাকেন, তাঁদের সমস্যা বাড়ছে ভীষণভাবে। মুখোমুখি বসে কথা বলার লোক নেই।
সমাধান কীভাবে?
তবে, বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে জীবনে কিছুটা নিয়ম মানা খুব জরুরি। যেমন কোনও ভাবেই ব্রেকফাস্ট বাদ দেওয়া যাবে না। বেশি রাতে কাজ করতে হলে, খেতে হবে হেলদি ও হাল্কা খাবার। ব্রেকফাস্টে প্রোটিনের পাশাপাশি, ভিটামিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার থাকাটা খুব জরুরি।
দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচ বার খান।একবারে অতিরিক্ত খাবেন না।
খাবারের তালিকায় রাখুন মাছ, মাংস, ডিমের পাশাপাশি সবজি, ফল, আমন্ড, পিস্তা, আখরোট।
কাজ করতে করতে কিছু খেতে হলে হেলদি অভ্যাস করুন। বার্গার, পিজ্জার বদলে রোস্টেড মাখনা, আখরোট, আমন্ড, পপকর্ন, স্যুপ, গ্রিন টি, স্যাঁকা পাঁপড় খেতে পারেন।
আর কোমরে, পিঠে, ঘাড়ে ব্যাথা কমাতে অন্তত ১০-১৫ মিনিট ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ জরুরি। যদি সেটা করতে একেবারেই ইচ্ছে না করে, তাহলে বরং কাজের ফাঁকে মিনিট ১০-এর ব্রেক নিয়ে পছন্দের যে কোনও গান চালিয়ে মনের সুখে নেচে নিন। এতে চোখটাও রেস্ট পাবে। সময় করে আধ ঘণ্টা যে কোনও সময় ছাদে হাঁটুন। খোলা আকাশের নীচে দাঁড়ালে মনটা ভাল হতে বাধ্য।
একলা থাকার অবসাদ কাটাতে দিনে একটু সময় বের করে বরং প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বেরিয়ে পড়ুন। অনলাইনে এখন সব পাওয়া গেলেও, টুকটাক জিনিস কিনতে বাইরে গেলে দুটো মানুষের সঙ্গে দেখা, কথা হবে।আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করুন। ছুটির দিনে বন্ধুরা মিলে ডে-আউট করুন। অবসাদ যদি বেশি হয় তবে মনোবিদের পরামর্শ নিন।মনে রাখবেন, শরীরের যেমন অসুখ হয়, মনেরও হতে পারে।