অধিবেশনের শেষ দিনে তাণ্ডব বিধানসভায়

রামপুরহাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন। বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনে সোমবার নজিরবিহীনভাবে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন শাসক ও বিরোধী বিধায়কেরা। শাসক দলের এক বিধায়কের নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে বিজেপির অভিযোগ তাদের এক বিধায়ককে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়েছে।

সোমবার অধিবেশনের শুরু থেকেই বগটুই কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু বিজেপি।এই সময় তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল মন্ডল সহ বেশ কয়েকজন ট্রেজ ট্রেজারি বেঞ্চ এর সদস্যরা এর বিরোধিতায় সরব হন ।সবমিলিয়ে আজকের অধিবেশনের শুরুতেই স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহাত হয়। অধ্যক্ষ সকলকে শান্ত হতে বলেন। কেউই কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত করেনি।বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন কেন মুখ্যমন্ত্রী বাইরে বকটুই কাণ্ড নিয়ে বিবৃতি দিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হইচই শুরু করে বিজেপি। বিধানসভায় ওয়েলে নেমে তারা স্লোগান দিতে শুরু করেন। বিধানসভার সচিবের টেবিলের কাগজপত্রও কেড়ে নিতে গিয়ে বিধানসভার নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গেও হাতাহাতিতে জড়িয়ে বিজেপি বিধায়কদের একাংশ ।বিজেপি বিধায়করা প্ল্যাকার্ড হাতে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে একটি নিরাপত্তারক্ষীদের একটি বেষ্টনী তৈরি করা হয়। এই বেষ্টনীর অগ্রভাগে ছিলেন মহিলারা। এরপরই দেখা যায়, বিজেপির মহিলা বিধায়করা ওই সমস্ত মহিলা নিরাপত্তারক্ষীদের বেষ্টনী ভাঙতে তৎপর হন। তাতেই শুরু হয় কার্যত ধস্তাধস্তি।এই সময় হঠাৎই দেখা যায় দু’দলে বিধায়ক রা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিধানসভায় ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছে। সেসময় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিষয়টি থামানোর চেষ্টা করেন। তখনই দুপক্ষের বিধায়কদের মধ্যে রীতিমতো মারামারি শুরু হয়ে যায়।

 

তৃণমূল বিধায়কদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন বিজেপি বিধায়করা। দু পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, চড়, কিল, ঘুষিও চলতে থাকে। বিধায়ক নরহরি মাহাতো ধস্তাধস্তির মধ্যে মাটিতে পড়ে যান। বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিজ্ঞার সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির মাঝে পড়েন ফিরহাদও। এমনকি মহিলা নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গেও ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয় বিজেপি বিধায়কদের।বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা এরকম আচরণ করবেন না।,আপনারা মহিলাদেরকে ধাক্কাধাক্কি করছেন! এটা উচিত করছেন না। আপনারা মহিলা সিকিউরিটিকে ধাক্কাধাক্কি করছেন। আপনারা সরে যান। আমাদের এখানে যে সব সমস্ত সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে সেগুলির হিসেব রাখা হবে। সেই অনুযায়ী পদক্ষেপও নেওয়া হবে।” শাসক এবং বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতি তে বেশ কয়েকজন আহত হন।

চুঁচুড়ার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মজুমদার আহত হওয়ায় তাকে এসএসকেএম-এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার অভিযোগ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিয়েছেন। অপরদিকে বিজেপি দলের বিধায়ক কে হরি মাহাতো কে অধিবেশন কক্ষে মেঝেতে মারা হয় বলে অভিযোগ। এছাড়াও তাদের বেশ কয়েকজন বিশেষ করে মহিলারা বিধায়কদের মারা হয়েছে বলে বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা অভিযোগ করেন। বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের তরফেই আগে বিজেপি বিধায়কদের আঘাত করা হয়।
। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও বিজেপি মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা, শঙ্কর ঘোষ, দীপক বর্মণ, নরহরি মাহাতোকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিধানসভার চলতি অধিবেশন স্থগিত না হওয়া পর্যন্ত এই সাসপেনশন বলবৎ থাকবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − twelve =