ভাসমান হোম-স্টেতে বসে দেখবেন নাকি ‘লোকটাক’-এর রূপ বদল!

আধুনিকতা এখানে বিশেষ নেই। কিন্তু যেটা আছে সেটা হল প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। নদ-নদীর অববাহিকায় ঘেরা মণিপুরের রূপ বাড়িয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়। আর আছে, এখানকার আদি বাসিন্দাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। সব মিলিয়েই এখানে ভ্রমণের হাতছানি।

তবে এই মণিপুরের (Manipur)অন্যতম আকর্ষণ কিন্তু ‘লোকটাক হ্রদ'(Loktak Lake)। কারণ, এমন হ্রদ গোটা ভূ-ভারতে কেন, বিশ্বেই আর নেই।এই হ্রদেই রয়েছে ভাসমান অংখ্য দ্বীপ। রাজধানী ইম্ফল শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে  বিষ্ণুপুর জেলায় মোইরাং শহর। সেখানেই দেখা মেলে প্রায় ২৮৭ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এক লেক বা হ্রদের।

 

মণিপুর নদী আর অন্য আরও কয়েকটা ছোট নদীর জলে মিষ্টি জলের এই হ্রদটা তৈরি। মণিপুরের মেইতেই লোকভাষায় ‘লোক’ মানে নদী, আর ‘টাক’ হলো যেখানে শেষ হয়েছে। বিশাল এই হ্রদকে ঘিরে রেখেছে ছোট ছোট পাহাড়। গভীরতা প্রায় ১৫ ফুট। আর রয়েছে জলজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি ভাসমান দ্বীপ। আর কিছু আছে যেগুলোর নীচের শিকড় লেকটার নীচের মাটি পর্যন্ত চলে গেছে। এই দ্বীপগুলোকে মণিপুরী ভাষায় বলে ফুমদি বা ফুমশোঙ্। এই বৈশিষ্ট্যই লোকটাক হ্রদকে আলাদা করেছে সমস্ত হ্রদের চেয়ে।ফুমদিগুলোর কিছু কিছু গোলাকার, আবার কিছু অনায়তাকার। ফুমদিতে ছোট ছোট চালাঘর তৈরি করে মানুষ বসবাস করে।এখন অবশ্য পর্যটকদের জন্য সেখানে হোম স্টে তৈরি হয়েছে।

সেই হ্রদের জলেই খেলে বেড়ায় নানা প্রজাতির মাছ। তাই মণিপুরে খাবার জন্য মাছের অভাব একেবারেই নেই। অদ্ভূত এই লোকটাকের শোভা। দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে ধরা দেয় সুবিশাল হ্রদ। প্রতি মুহূর্তের এই রূপ যদি উপভোগ করতে চান, তাহলে বেছে নিতে পারেন ভাসমান দ্বীপের কোনও একটা হোমস্টে।

ভোরের নরম আলোয় লোকটাক শান্ত, সুন্দর। মেঘের আনাগোনায় বদলে যায় তার দৃশ্যপট। আকাশ পরিষ্কার থাকলে নজরে আসে দূরে নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের সারি। আর সেই পাহাড়ের গায়ে চাদর বিছিয়ে রাখে মেঘ। এখানে আকাশ যেন অনেক বেশিই নীল। ভোরের স্নিগ্ধ স্পর্শে সেই নীলে প্রাণ ঢেলে দেয় পাখিদের কলতান।

সূর্যাস্তে তার আর এক রূপ। আকাশে রং ছড়িয়ে একসময় হ্রদের গায়ে ডুবে যায় সূর্য।সন্ধেয় দ্বীপের ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠে সৌর-লণ্ঠন। সেই আলোয় পুরো লোকটাককে দেখলে মনে হবে যেন তারা জ্বলছে। তাই রাতের বেলা নৌকায় চড়ে হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।

আর বর্ষায় এই হ্রদ যেন যৌবনবতী। বৃষ্টি তাতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে।

হ্রদের বেশ কাছেই রয়েছে কেইবুল লামজো ন্যাশনাল পার্ক। এটি বিশ্বের একমাত্র ভাসমান জলাভূমি তথা জাতীয় উদ্যান, যেখানে মণিপুরের জাতীয় পশু সাঙ্গাই হরিণ বা নাচুনে হরিণের দেখা মেলে। দুই থেকে চার ফুট পর্যন্ত সবুজ আর হলুদ লম্বা লম্বা ঘাসে ঘুরে বেড়ায় এ ধরনের হরিণ। এখানে রয়েছে পর্যটক বাংলো ও ওয়াচ টাওয়ার। এই ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখা যায় দিগন্তবিস্তৃত উজ্জ্বল সবুজ ভাসমান ঘাসজমি।

কীভাবে যাবেন- বিমান, ট্রেন বা সড়ক পথে ইম্ফল হয়ে লোকটাক হ্রদে পৌঁছনো যায়। থাকার জন্যে এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রিসোর্ট বা হোম স্টে। স্বল্প মূল্যেই এসব জায়গায় থাকা বা খাওয়ার বন্দোবস্ত হয়ে থাকে। নৌকো ভ্রমণ মূল আকর্ষণ। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি বেড়ানোর ভাল সময়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

thirteen − five =