দিন, মাস, তারিখ সব হিসেব গুলিয়ে গিয়েছে। সুড়ঙ্গের এ প্রান্ত বন্ধ, ও প্রান্তও। মাঝের ২ কিলোমিটারের অন্ধকারে কোনওরকমে বেঁচে আছে ৪১টি প্রাণ। কখনও জাগছে আশা, ঠিক একদিন সূর্যের আলো দেখতে পাবেন তাঁরা। জড়িয়ে ধরতে পারবেন প্রিয়জনদের। খোলা আকাশটায় চোখ রাখতে পারবেন, বুকে ভরে শ্বাস নেবেন। কিন্তু কবে?
উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গের উদ্ধারকাজ বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। আমেরিকার খনন যন্ত্র অগারের গতিতে উদ্ধারের যে আশা জেগেছিল, তা শেষ হয়ে গিয়েছে গত শুক্রবার যন্ত্র বিকল হওয়ায়। কিন্তু থেমে থাকলে তো চলবে না। সুড়ঙ্গের মাথার দিক থেকেও খনন শুরু হয়েছে। এদিকে, ঘুরপথে টানেলে প্রবেশের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। রবিবার ভারতীয় সেনাবাহিনীও নামল উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলের উদ্ধারকাজে। এক দিকে যখন পাহাড়ের মাথা দিয়ে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করবেন উদ্ধারকারীরা, তখন সেনা কাজ করবে মূল রাস্তাটি পরিষ্কার করার জন্য। যে পথ আপাতত আমেরিকার অগার মেশিনের দৌলতে পুরোপুরি বন্ধ।
শনিবারই উদ্ধারকাজের অন্যতম হোতা সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ প্রকারান্তরে বুঝিয়েছেন উদ্ধারকাজ বড়দিনের আগে হবে বলে আশা। মানে একমাস। ইতিমধ্যে ১৫দিন কেটে গিয়েছে অন্ধকার গহ´রে। এরপর আরও একমাস? তাও কোনও সুনির্দিষ্ট আশা নেই। শুধু চেষ্টার পর চেষ্টা। একপথ বন্ধ হলে অন্য পথ।
এই পরিস্থিতিতে আটকে থাকা শ্রমিকদের মনোবল যাতে ভেঙে না যায় সে ব্যাপারেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। পাইকে করে অক্সিজেন পৌঁছনোর পাশাপাশি সহজপাচ্য খাবার দেওয়া হচ্ছে। মন ভালো রাখতে তাঁদের বসে বসেই নানারকম খেলা খেলতে বলা হচ্ছে। তাঁদের কাছে মোবাইল ফোন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সুড়ঙ্গের গভীরে সিগ্ন্যাল না মিললেও মোবাইলে ‘গেম’ খেলাই যায়। বিভিন্ন ‘গেম’ খেলে আপাতত সময় কাটাচ্ছেন ৪১ শ্রমিক। এ ছাড়া, তাঁদের জন্য সুড়ঙ্গে পাঠানো হয়েছে লুডোর বোর্ড। তাতে সাধারণ লুডো, সাপলুডো খেলছেন শ্রমিকেরা। এমনকি, তাস খেলার আসরও বসছে প্রায় প্রতি দিনই।
খননযন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়ায় শাবল-গাঁইতি নিয়ে খোঁড়া হবে সুড়ঙ্গের বাকি অংশ। সেই কারণেই সময় আগের চেয়ে অনেক বেশি লাগবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বড়দিনের মধ্যে ৪১ জনকে বাড়ি ফেরানো হবে, আশাবাদী কর্তৃপক্ষ।
পাইপের মাধ্যমে প্রতি দিন খাবার, জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের কাছে। পরিজনদের সঙ্গে কথাও বলছেন তাঁরা। কোনও কোনও শ্রমিদের উদ্বিগ্ন পরিজনেরা সুড়ঙ্গের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে থেকে গিয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে সরতে চাইছেন না তাঁরা।
তবে শ্রমিকদের উদ্ধারে কোনও ভাবেই তাড়াহুড়ো করা যাবে না বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান আর্নল্ড ডিক্স। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের অগ্রাধিকার হল শ্রমিকদের সকলকে অক্ষত অবস্থায় বাড়িতে ফেরানো। তাতে সময় লাগবে।
ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজের দায়িত্বে রয়েছে ওএনজিসি, এসজেভিএনএল, আরভিএনএল, এনএইচআইডসিএল এবং টিএইচডিসিএল। এই সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করছেন ডিক্স। রবিবার সকাল থেকে অগার মেশিনটির ব্লেড কেটে সেটি বার করে আনার কাজ শুরু করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
ইতিমধ্যেই ব্লেড কেটে মেশিনটিকে সরানোর জন্য প্লাজমা কাটার নিয়ে আসা হয়েছে হায়দরাবাদ থেকে। সেনা তাদের সরঞ্জাম নিয়ে পৌঁছে গিয়েছে সুড়ঙ্গের প্রবেশপথের কাছে। সূত্রের খবর, রবিবার রাতের মধ্যেই ২৫ টন ওজনের ওই অগার মেশিনটিকে টানেলের এস্কেপ পাইপ থেকে বার করে আনার প্রক্রিয়া অনেকটা সম্পূর্ণ করা যাবে। টানেল থেকে সেটি বার করে আনার পরই ওই পথে প্রায় ১০ মিটার বন্ধ পথ শাবল, গাঁইতির সাহায্যে খনন করা হবে। সেই কাজ করবে ভারতীয় সেনা।