‘মুখোশ খুলে গিয়েছে, আপনার রায় দেবে জনগণ’, নাম না করে প্রাক্তন বিচারপতিকে তীব্র কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর

আজ আন্তর্জাতিক নারীদিবস। তবে তার একদিন আগে বৃহস্পতিবার নারীদিবস উপলক্ষে কলকাতায় মিছিলে হাঁটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহিলা তৃণমূলের সদস্যরা। কলেজ স্কোয়্যার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মিছিল করে এগোয় মিছিল। রাস্তার দুধারে মমতাকে স্বাগত জানান সাধারণ মানুষ। মহিলা তৃণমূলের ডাকে মিছিলে কলকাতার রাজপথে হাঁটলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কয়েক গজ পিছনে হাঁটলেন দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

ব্রিগেডে জনগর্জন সভার ৭২ ঘণ্টা আগে মমতা-অভিষেকের একসঙ্গে মিছিল তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ তো বটেই। গত ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধনের দিনেও হাজরা থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত হেঁটেছিলেন মমতা-অভিষেক। মঞ্চে বত্তৃ«তাও করেছিলেন দু’জন।

প্রায় প্রতি বছর নারীদিবসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নারী বাহিনীকে নিয়ে মিছিল করেন। সেই মিছিলে দেখা যায় বহু সেলিব্রিটিকেও। এবছরও সেই মিছিল হল। তবে তা নারীদিবসের একদিন আগে। কারণ হিসেবে আগেই শোনা যাচ্ছিল শিবরাত্রির কথা। ৮ তারিখ শিবরাত্রি। ওইদিন মহিলাদের নানা আচার-অনুষ্ঠান থাকে। তাই মিছিল সংগঠিত করা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছিল শাসকদল।

৭ তারিখ মিছিল শেষে সভা থেকে একদিন আগে নারীদিবস পালনের কারণ নিজেই জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন শিবরাত্রির কথাই।  আগামিকাল শিবরাত্রিতে মহিলারা ব্যস্ত থাকবেন। অনেকেই উপোস করেন। উপোস করে এভাবে মিছিল বা সভায় যোগদান কঠিন বলেই আগেভাগে নারীদিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত বলে জানালেন তিনি। এদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন শশী পাঁজা, মালা রায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য-সহ অন্যান্যরা। উল্লেখ্য, পথের আন্দোলন দিয়েই রাজনৈতিক জীবন শুরু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রতিবাদ হোক বা যে কোনও আন্দোলন, রাস্তায় নেমে কর্মসূচি সফল করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বিরোধী নেত্রী থেকে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরও সেই পথের আন্দোলন থেকে সরে আসেননি তিনি।

সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদান করা নিয়ে তাঁকে তীব্র কটাক্ষ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিতে যোগদানের কিছুক্ষণের মধ্যে ধর্মতলায় নারী দিবসের সমাবেশ থেকে তাঁকে নাম না করে তীব্র কটাক্ষ করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, প্রাক্তন বিচারপতির জন্যই হাজার হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি হয়নি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নাম করে আক্রমণ করেছেন। এখন তার মুখোশ খুলে পড়েছে। প্রাক্তন বিচারপতিকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন, তিনি যেখানেই ভোটে দাঁড়াবেন সেখানে পড়ুয়াদের পাঠানো হবে। পড়ুয়ারাই তাঁকে জবাব দেবে। তিনিও যে আইনজীবী ছিলেন, তা মনে করিয়ে অভিজিৎকে আক্রমণ করেন মমতা। প্রাক্তন বিচারপতির নামোচ্চারণ না করেও তিনি বলেন, ‘এঁদের দিকে তাকিয়ে মানুষ বিচার পাবে? বিচারের চেয়ারে বসে রোজ একটা করে পিল (পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন) গিলছে! রবীন্দ্রনাথ লিখে গিয়েছিলেন, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’

অন্যদিকে, তাপস রায়ের দলত্যাগ প্রসঙ্গে নাম না করে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী বলেন, বিশ্বাসঘাতকদের মানুষ কখনো ক্ষমা করে না। এজেন্সির ভয়ে যারা বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে সাফ হতে গিয়েছেন মানুষ তাঁদের জবাব দেবেন।

অন্যদিকে, এদিনের সমাবেশ আয়োজন করার জন্য তিনি সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান। প্রসঙ্গত, তাপস রায় নিজের দলত্যাগের কারণ হিসাবে ওই দুই নেতার প্রতি বিরোধ ছিল অন্যতম। নিজের ভাষণের একটি অংশে বিজেপিকে পিন্টুবাবু বলে কটাক্ষ করেন মমতা। পাশাপাশি, জানিয়ে দেন তিনি রাজ্যে এনআরসি করতে দেবেন না বলে বা আধার কার্ড বাতিলে বাধা দেন বলে পিন্টুবাবুর রাগ হয়। এরপর রাজ্যে আসা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় টিম নিয়েও মন্তব্য করেন মমতা। তাঁর মতে, বিভিন্ন ঘটনায় রাজ্যে ৪৫৫ টি কেন্দ্রীয় দল এসেছে। কিন্তু মণিপুরে কোনও কেন্দ্রীয় দল যায়নি।  তিনি জানান, রাজ্যে যে সমস্ত কেন্দ্রীয় দল এসেছে তাদের রাজ্য প্রশাসন স্বাগত জানিয়েছে। তবে এই সৌজন্যকে দুর্বলতা ভাবলে ভুল হবে। বারবার অত্যাচার করলে তৃণমূল তার জবাব দেবে।

এরপর দল বদলের প্রসঙ্গও আসে তাঁর ভাষণে। তাঁর দাবি, বাড়িতে ইডি’র হানার ভয়ে অনেকে বিজেপিতে যোগদান করছেন। মমতার কথায়, ‘এখন বিষয়টা এমন হয়ে গিয়েছে যেন কেউ তৃণমূলে থাকলে চোর আর বিজেপিতে গেলে ওয়াশিং পাউডার ভাজপা। কেউ কেউ ভয় পাচ্ছে বাড়িতে ইডি চলে যাবে। একদিন বাড়ি গেলে ভয় পাচ্ছে। গদ্দাররাই তাঁদের ফোন করে বলে দিচ্ছে বিজেপিতে চলে যাও। তাঁরা বিজেপিতে চলেও যাচ্ছে। চিরদিন এরকম চলবে না।’

 

মিছিলে হাজির সন্দেশখালি থেকে আসা মহিলারা

এদিন মিছিল ও জমায়েতে সন্দেশখালি থেকে আসা বেশ কিছু মহিলাকেও সামিল করা হয়। তারা দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই সন্দেশখালিতে শান্তি ফিরেছে। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলায় দেশের মধ্যে এমন জায়গা যেখানে মহিলারা সম্পূর্ণ নিরাপদ। হাথরস এবং মণিপুরের কথা উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় নীরব। কিন্তু এ রাজ্যে কোন ঘটনা ঘটলে তৃণমূল কর্মীদেরও রেয়াত করা হয় না। মমতা বলেন, ‘কালকে একজন এসে সন্দেশখালি নিয়ে অনেক কিছু বলে গেলেন। কিন্তু ভুল সন্দেশ দিলেন। কয়েকটা ঘটনা হতেই পারে। হতে পারে সব খবর আমরা পাই না। হাতের পাঁচটা আঙুল সমান নয়। অন্যায় হয়ে থাকলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিই। তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার করতেও পিছপা হই না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 − 3 =