টর্নেডোর তাণ্ডবে মানুষ বিপদে পড়েছে খবর পেয়ে রবিবার রাতেই উত্তরবঙ্গ পৌঁছে গিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। খবর পেয়েই জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দেন মমতা। চলতে থাকে মনিটরিং। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। জখম কমবেশি তিন শতাধিক। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬৪ জন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের অস্ত্রোপচারের জন্য জলপাইগুড়ি হাসপাতালে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। সমস্ত চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
জলপাইগুড়ির পাশাপাশি রবিবারের ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ হয়েছে আলিপুরদুয়ারেরও একাংশ। রবিবার রাত জেগে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে যাওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালেও যান মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার জলপাইগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারের সেই সব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবিবার কয়েক মিনিটের ঝড়ে আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের চকোয়াখেতি, তপসিখাতা এলাকাতেও ক্ষয়ক্ষতি হয় বহু বাড়িতে। আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকের পাশাপাশি কুমারগ্রাম ব্লক, আলিপুরদুয়ার এক ব্লক-সহ একাধিক জায়গায় শিলাবৃষ্টির জেরে টোম্যাটোর পাশাপাশি একাধিক ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝড়ে বড়-বড় গাছ ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে একাধিক এলাকা। অনেকেই আশ্রয়হীন। তাঁদের ত্রাণশিবিরে রাখা হয়েছে। সোমবার দুপুরে আলিপুরদুয়ারের ছ’মাইলের একটি প্রাথমিক স্কুলের ত্রাণশিবিরে যান মুখ্যমন্ত্রী। কথা বলেন দুর্গতদের সঙ্গে। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, ‘তপসিঘাটা গ্রামে রিলিফ ক্যাম্পে যাঁরা আছেন, সেই পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁদের বক্তব্য শুনেছি। চোখের সামনে যে ঘরগুলি দেখলাম, সেগুলি পুরোটাই টিনে চাপা গড়ে গিয়েছে, গাছে চাপা পড়ে গিয়েছে। একটা জিনিসও লোকে ঘর থেকে বার করতে পারেনি। এই তপসিঘাটা স্কুলে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন।’
মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘এখন এমসিসি (নির্বাচনী আচরণবিধি) চালু আছে, কিন্তু বিপর্যয় জরুরি বিষয়। বিপর্যয় ব্যতিক্রমী বিষয়। আমাদের সরকার আছে, প্রশাসন আছে। আমি প্রশাসনকে বলব, সমীক্ষা করে দেখুক এবং নিজের মতো করুক। কার কতটা ঘর ভেঙেছে, কতটা আংশিক ভেঙেছে, কতটা পুরো ভেঙেছে। যাদের বাড়িতে কিচ্ছু নেই, প্রশাসন তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। মানুষ বিপদে পড়লে তাঁকে উদ্ধার করাই আমাদের কাজ।’
আলিপুরদুয়ার থেকে মমতা জানান, মঙ্গলবার তিনি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে কোচবিহারে পাঠাবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কুমারগ্রামের ত্রাণশিবিরে যাবে অরূপ। কোচবিহারেও ক্ষতি হয়ে থাকলে প্রশাসন পদক্ষেপ করবে। সেই মতোই নির্দেশ দেওয়া আছে।’
এই পরিস্থিতিতে দুর্যোগের খবরাখবর নিতে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নিজের এক্স হ্যান্ডলে এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি দুর্গতদের সববরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি, আহতদের দ্রুত আরোগ্য ও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন অমিত শাহ। রবিবারের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসমের বেশ খানিকটা অংশও। এদিনে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন অমিত শাহ। সোশাল মিডিয়া পোস্টে জানিয়েছেন তাও। পাশাপাশি, দুই রাজ্যেই দুর্যোগ মোকাবিলায় বিজেপির কার্যকর্তাদের ময়দানে নামার অনুরোধও করেছেন অমিত শাহ। বিপর্যয়ের খবর পেয়ে রবিবারই তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।