মকাইবাড়িতে চা শ্রমিকের বেশে মুখ্যমন্ত্রী, তোলেন চা পাতাও

পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উত্তরবঙ্গে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি গিয়েছিলেন পাঙ্খাবাড়ি রোডের ধারে একটি চা বাগানে। সেখানে গিয়ে চা-পাতা তোলার কায়দা শেখেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর নিজেও চা শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে চা-পাতা তোলেন।

পাহাড় সফরে গেলে বরাবরই তাঁকে অন্য মুডে দেখা যায়। কখনও পাহাড়ে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ছোট্ট দোকানঘরে ঢুকে মোমো বানানো কিংবা ছোটদের কোলে তুলে আদর করে দেওয়া। এভাবেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে অভ্যস্ত উত্তরবঙ্গের পাহাড়বাসী। আর এবার মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা গেল চা শ্রমিকের ভূমিকায়।

কার্শিয়াংয়ে গিয়ে বৃহস্পতিবার তিনি একেবারে চা শ্রমিকের ভূমিকা পালন করলেন। মকাইবাড়ি চা বাগানে তাঁকে দেখা গেল সম্পূর্ণ অন্য রূপে। পরনে ঐতিহ্যবাহী সাদা-লাল পোশাক, পিঠে ঝুড়ি। বাগান শ্রমিকদের সঙ্গে মিশে তাঁদের থেকে শিখে নিলেন চা পাতা তোলা। বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে পাতাও তুললেন মুখ্যমন্ত্রী। চা তুলতে তুলতে শ্রমিকরা যে গান করেন, তাও তাঁরা শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনিও তাঁদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে খানিকটা গাইলেন। সবমিলিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মকাইবাড়ি চা বাগান সাক্ষী রইল সম্পূর্ণ অন্য এক ছবি।

এদিন বেলার দিকে বেড়াতে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে যান মকাইবাড়ি টি এস্টেটে। এখানকার ম্যানেজারের বাংলোয় রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চা বাগানে তখন কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। মুখ্যমন্ত্রী চা পাতা তোলা নিয়ে তাঁদের কাছে জানতে চান। নিজেও পাতা তুলতে আগ্রহী বলে জানান।

এর পর শ্রমিকরা তাঁকে চা বাগানের ঐতিহ্যের মতো পোশাকে সাজিয়ে দেন। পাতা তোলা শেখান। মুখ্যমন্ত্রীও পিঠে ঝুড়ি নিয়ে চা পাতা তোলেন। তাঁকে ঘিরে ছিলেন শ্রমিকরা। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাঁদের কাজ করছেন, তাতে অত্যন্ত আনন্দিত পাহাড়ি মেয়েরা।  পরে তিনি চা শ্রমিকদের বস্ত্র বিতরণ করেন। বলেন, ‘ওদের থেকে চা পাতা তোলা শিখলাম। তুললামও। আমি অনেকদিন আগে কবিতা লিখেছিলাম , দুটি পাতা একটি কুঁড়ি/ তার নাম চা-সুন্দরী।’ উল্লেখ্য, চা বাগান শ্রমিকদের সুবিধার্থে ‘চা-সুন্দরী’ প্রকল্প চালু করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। তার কথাই আবার মনে করিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

চা-পাতা তোলার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজ ওদের পোশাক পরে, ঝুড়ি নিয়ে আমি নিজে চা-পাতা তুললাম। চা-পাতা তোলাটা ওদের কাছ থেকে শিখলাম। এখন আমি যে কোনও চা বাগানে গিয়ে চা-পাতা তুলতে পারি। এটা আজ আমার বড় শিক্ষা হল। পাহাড়ের সঙ্গে আমাদের রক্তের বন্ধন হয়ে গেল। হৃদয়ের মেলবন্ধন রচিত হল। পাহাড় আমার নিজের বাড়ি হয়ে গেল। আমি কিন্তু মুখে বলি না। রক্তের সম্পর্ক তৈরি করে দেখাই। আই অ্যাম সো হ্যাপি! উই আর ওয়ান (আমি আজ খুবই খুশি। আমরা সবাই এক)।’

চা-পাতা তোলা শেষে বাগান শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। তরল সোনার রঙের চায়ে চুমুক দিতে দিতে তার তারিফও করেন মুখ্যমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 5 =