নিজস্ব প্রতিবেদন, কলকাতা: গ্রিন করিডর করে অঙ্গ এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন বহু হয়েছে। কিন্তু গ্রিন করিডর করে রোগীর দেহের হাড় নিয়ে গিয়ে তা ক্যানসারমুক্ত করে ফের এনে রোগীর শরীরে জুড়ে দেওয়া, এটা নজিরবিহীন। আর এমন ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতা।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন নিউজ উইকের বিচারে সেরার তকমা পেয়েছে এসএসকেএম। এবার দেশের প্রথম সারির অর্থোপেডিক সার্জারিতেও নাম জুড়ে গেল এসএসকেএম-এর।
বিষয়টা কী? রোগী ছিল শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। কিন্তু তার বা ঁপায়ের হাড় গ্রিন করিডর করে কড়া পুলিশ প্রহরায় আনা হয় এসএসকেএম হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে। সেখানে ক্যানসার আক্রান্ত পায়ের কোষ নষ্ট করে ৪৫ মিনিটের মধ্যে ফের রোগীর পায়ে প্রতিস্থাপন করা হয় সেই হাড়। ফলে রোগীর পা কেটে বাদ দিতে হয়নি। সমস্ত কিছু ঠিক থাকলে দিন পনেরো পর সুস্থ হয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে যাবে ওই কিশোর। এই প্রথম এমন এক ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজ্য।
ডাক্তারি পরিভাষায় এই পদ্ধতির নাম ‘এসট্রা করপোরাল রেডিওথেরাপি অ্যান্ড রি ইম্পল্যান্টেশন অফ বোন উইথ মেগা প্রস্থেটিক’। প্রায় আট ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর অর্থোপেডিক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মুকুল ভট্টাচার্য জানান, অস্ত্রোপচার সফল। রোগীর বাঁ পায়ের ফিমারে যে হাড় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তা ক্যানসারমুক্ত।
মালদার হরিশচন্দ্রপুরের নাসিরুদ্দিন। বছর পনেরোর ছেলেটি প্রায় এক মাস আগে এসএসকেএম হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে বাঁ পায়ের অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এসেছিড়। বেশ কয়েকটি পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন নাসিরুদ্দিনের বাঁ পায়ের ফিমার বোন ক্যানসারে আক্রান্ত। এই বয়সে একটা তরতাজা জীবন নষ্ট হতে দেওয়া যায় না কিছুতেই। এদিকে রোগীকে বাঁচাতে হাড় বাদ দিলে তার হাঁটাচলার ক্ষমতা চলে যাবে।
হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুকুল ভট্টাচার্যর কথায়, রোগীকে সুস্থ করে জীবনের স্বাদ ফিরিয়ে দিতে হবে। এই ইচ্ছেটাই আমাদের সামনে একমাত্র চ্যালেঞ্জ ছিল। তাই বিদেশে চালু হওয়া একেবারে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করতে কোনও দ্বিধা ছিল না। অঙ্কো অর্থো বিভাগের ডা. কৌশিক নন্দী ঠিক করেন ফিমারের চার ভাগের তিনভাগ কেটে রেডিওলজিতে এনে ক্যানসার কোষগুলি নষ্ট করা হয়। পরে সেই হাড়টাই প্রতিস্থাপন করা হয়। টাটা ক্যানসার হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় বেশ কয়েকজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ যুক্ত হন এই অস্ত্রোপচারে।
রোগী আইসিইউতে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় রিপোর্ট পাচ্ছেন। ততই খুশিতে উজ্জ্বল হচ্ছেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচার থেকে প্রতিস্থাপন গোটা বিষয়টি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন অধিকর্তা ডা. মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়।