গুয়াহাটি : পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পেছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকা ছিল বলে প্ৰকাশ্য জনসভায় অভিযোগ তুললে গত ২৪ এপ্রিল অসমের নগাঁও জেলা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দল এআইইউডিএফ নেতা তথা ধিঙের বিধায়ক আমিনুল ইসলাম। এবার গ্রেফতারকৃত বিধায়ক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ), ১৯৮০-এর ধারা ৩(২)-এর বলে মামলা রুজু হয়েছে। এ খবর জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।
আমিনুল ইসলামের সাম্প্রতিক প্রকাশ্য বিবৃতি সম্পর্কে নগাঁওয়ের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট কর্তৃক জমা দেওয়া একটি প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারণায় গিয়ে প্ৰকাশ্য জনসভায় আমিনুল ইসলাম একটি উস্কানিমূলক এবং প্রদাহজনক বক্তৃতা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এর পর ওই ভাষণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক ভায়রাল হয়। ভিডিওয় দেখা ও শোনা গেছে, পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় সরকারি ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে ভিত্তিহীন দাবি করেছিলেন আমিনুল।
পুলিশ সপারের এই প্রতিবেদন পেয়ে নগাঁওয়ের ডিস্রি ষক্ট কমিশনার তথা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বিধায়ক আমিনুল ইসলামকে আটক করার জন্য জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) প্রয়োগ করেছেন।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেছেন, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টা সহ্য করা হবে না। রাজ্যের শান্তি ও সম্প্রীতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, পঞ্চায়েত নির্বাচন (সদ্য সমাপ্ত) উপলক্ষ্যে এআইইউডিএফ প্রার্থীদের হয়ে প্রচার সমাবেশে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করেছিলেন, পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পেছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকা ছিল। তাঁরা রাজনৈতিক লাভের জন্য এই ট্র্যাজেডি সংগঠিত করিয়েছেন।
আমিনুল বলেছিলেন, ২০১৯ সালে পুলওয়ামা কাণ্ডের মতোই পহেলগাম কাণ্ডে কেন্দ্ৰীয় সরকার জড়িত বলে ভয়ংকর অভিযোগ উঠেছে। তিনি বলেছিলেন, সন্ত্ৰাসবাদীরা নাম-ধৰ্ম জিজ্ঞেস করে পৰ্যটকদের হত্যা করেছে বলে বিজেপি সরকার ভুয়ো প্ৰচার চালিয়েছে।
বিধায়ক আমিনুলের আরও অভিযোগ, ‘আমার সন্দেহ হচ্ছে, কাশ্মীরে বার বার এ ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দেশে বিভাজন সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্ৰ করছে কেন্দ্ৰীয় সরকার। আমি এর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি।’
এখানেই শেষ নয়, তিনি বলেছিলেনন ‘সরকার যদি সত্য প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়, তা-হলে আমরা বিশ্বাস করতে বাধ্য হব, নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ উভয়ই এই দুটি হামলার পিছনে ছিলেন।’
এদিকে আমিনুল ইসলামের ওই মন্তব্যের পর নাম না ধরে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। পাকিস্তানকে সমর্থন করেন এবং পাকিস্তানপন্থী মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার এ-জাতীয় দেশবিরোধী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে, তাঁরা যে পদেই থাকুন না-কেন।’
অন্যদিকে আমিনুল ইসলামের ওই বক্তব্যের অনেকেই নিন্দা করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়া এবং দেশবিরোধী কাৰ্যকলাপের দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।