কলকাতা ও রামপুরহাট: অবোধ শিশু ও নারী দেহগুলো জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল দিন দুই আগে।দমকল আগুন নেভালেও, মনের আগুন জ্বলছে স্বজনহারা পরিবারগুলোর। রামপুরহাটের বগটুইয়ের ঘটনায় ক্ষোভ ফুটছে বুদ্ধিজীবী থেকে সাধারণ মানুষ। আর সেই আবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়ে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দেওয়া রামপুরহাট কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলেন, সে দিকেই সকলের চোখ ছিল। এদিন বগটুই গ্রামে এসে সেখানকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিরও প্রশ্নের উত্তর দিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার বলেছিলেন, ‘রাজ্যকে বলব দোষীরা যেন দ্রুত সাজা পায়।’ এদিন দুপুরে ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা মানুষগুলোকে শান্ত করলেন তিনি। ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেও জানালেন, প্রাণের দাম টাকা বা চাকরিতে হয় না। তবু বেঁচে থাকতে হয়। বাঁচার জন্যই এই সাহায্যটুকু। সেইসঙ্গে কড়া বার্তা তাঁর দোষীরা শাস্তি পাবেই। নির্দেশ দিলেন পুলিশ কর্তাকে এমনভাবে মামলা সাজাতে যাতে দোষী রেহাই না পায়।তিনি বলেন, ‘কেসটা খুব ভালোভাবে আটঘাট বেঁধে সাজাতে হবে। কারণ আমি শুনেছি আগের কেসটা, যেটা মার্ডার হয়েছিল তিন চার বছর আগে হাইকোর্ট থেকে বেল পেয়ে গিয়েছে।’
এদিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই তিনি কর্তব্যে অবহেলা করা পুলিশকর্মীদের কড়া নিন্দা করেন। একই সঙ্গে জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেন, বগটুই গ্রামের বাড়িগুলিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনিরুলকে গ্রেফতার করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি চাই আনিরুল থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করুক। নইলে যেখান থেকে হোক তাকে গ্রেফতার করতে হবে।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁদের বাড়ি পুড়ে গিয়েছে তাঁদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দিয়ে দিতে হবে ঘর বানানোর জন্য।’ জেলাশাসক জানান, তিনি তৈরি হয়েই এসেছেন। এদিনই টাকা দিয়ে দেবেন। ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা। জখম তিনটি শিশুর জন্য ৫০ হাজার টাকা করে ও গুরুতর জখমদের এককালীন এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবারের ঘটনায় জখমদের চিকিৎসা চলছে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখান যাওয়ার আগেই গুরুতর জখম একজনকে হেলিকপ্টারে কলকাতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেন মমতা। তবে শারীরিক কারণে সেটা সম্ভব নয় জানিয়ে মমতা বগটুইতে দাঁড়িয়েই বলেন, ‘জখমদের সকলের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার।’ পাশাপাশি মৃতদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।