সঞ্জয় সিং, পশ্চিম বর্ধমান
আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন রাজ্যের কৃষি উপদ্বেষ্টা তথা দুর্গাপুর পূর্বের বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি-র লজ্জাজনক হার নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ বিজেপি-র অন্দরে। তৃনমূল কংগ্রেসের বিরাট ব্যবধানে জিত যে আসলে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র সাংগঠনিক দুর্বলতা তা এক প্রকার পরিস্কার প্রকাশ পেয়েছে। বিজেপি যত শীঘ্র এই সত্যটা মেনে নেবে তত, তাদের আগামি দিনে ঘুরে দাঁড়াবার পথকে সুদৃঢ় করবে, শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক মহলের এমনই ধারণা।
বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার ২২ মার্চ আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েই কলকাতা থেকে সোজা চলে আসেন আসানসোলে। ৭৬ বছর বয়সে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার চুপিসারে প্রার্থী অগ্নিমিত্রা-কে তারই বিধানসভায় ২০ হাজার ৮৫৩ ভোটে হারিয়ে নজির সৃষ্টি করলেন। নিজের রাজনৈতিক দক্ষতা এবং কর্ম ক্ষমতা বিধায়ক-কে এই সাফল্য এনে দিয়েছেন যা আসানসোলের মন্ত্রী ‘ম্যাজিক ম্যানের’ বিধানসভার মার্জিন কেউ ছাপিয়ে গিয়েছে।
আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র, গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় এইবার লোকসভা উপনির্বাচনে ১৬ হাজার ৪০০ ভোটে লিড পেয়েছে তৃনমূল। অন্যদিকে গত বিধানসভা নির্বাচনে আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে ২৩ হাজারের বেশী ভোটে জিতেছিলেন বিজেপির অগ্নিমিত্রা পল। এইবার লোকসভা উপনির্বাচনে তারই বিধানসভা কেন্দ্রে যেখানে ঘরের মেয়ে হিসেবে নিজেকে ভোটের ময়দানে নামিয়ে ভোট চেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পল সেখানেই ২০ হাজার ৮৫৩ ভোটে লিড নিল তৃনমূল।
এই কাজ নিশব্দে করেছেন বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার। প্রদীপ মজুমদারের সব সময়ের সঙ্গী তাঁর ভাই জগবন্ধু মজুমদার জানালেন, ‘খুবই শক্ত আসন ছিল আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা। দায়িত্ব পাওয়ার পরই প্রদীপ মজুমদার প্রথমে গিয়ে সোজা মলয় ঘটকের সাথে আলোচনা করেন। তার পরের দিন থেকে সরাসরি বুথ কর্মীদের কাছে গিয়ে তাদের সাথে দফায় দফায় বসে আলোচনা করেন। কোথায় অসুবিধা তা জানতে চান। কি ভাবে সমস্যা সমাধান করতে হবে সেই পথ বলে দেন তিনি। এরপর সব সময় কর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে তাদের ভোটের কাজে উৎসাহ দিতে থাকেন।
সকাল ৯ টা থেকে শুরু নির্বাচনের কাজ, মাঝে দুপুরে ফিরে মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে ঘন্টা খানেকের বিশ্রাম, ফের শুরু নির্বাচনের কাজ যা চলত রাত ১১ টা পর্যন্ত। এখানেই শেষ নয়, ফিরে এসে নির্বাচনী প্রধান অফিসে মিটিং করতেন জেলার নেতাদের সঙ্গে। এরই মাঝে সকালে কোলকাতা গিয়ে নবান্নে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে আবার বিকেলে ফিরে এসে কর্মীদের সাথে আলোচনার পালা চলতে থাকে লোকসভা উপনির্বাচন-কে ঘিরে। ৭৬ বছর বয়সেও ওনার অক্লান্ত পরিশ্রম, আসানসোল উওর কেন্দ্রের থেকে বেশী লিড এনে দেয় তৃনমূল-কে দক্ষিণ বিধানসভায়। দক্ষিণ বিধানসভার শহর অঞ্চলে তৃনমূলের লিড ৪ হাজার এবং গ্রামীণে প্রায় ১৭ হাজার।
জগবন্ধু বাবু জানান, এই তীব্র গরমেও ভোট প্রচারের শেষ দিন পর্যন্ত প্রধান নির্বাচনী অফিসে বসে নিজে হাতে শহরের বুথের কর্মীদের ভোটের শিল, গালা, পেপার থেকে শুরু করে অন্যান্য ভোট করার সরঞ্জাম বিলি করার পর আবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত গ্রামীণ এলাকাতে ভোটের সরঞ্জাম বিলিতে ব্যস্ত ছিলেন বিধায়ক প্রদীপ মজুমদার’। প্রদীপবাবুর সাথে এই কাজে সমানতালে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক প্রবোধ রায়(ক্যাপ্টেন দা)। প্রবোধ রায় বলেন, ‘যেভাবে প্রথম দিন থেকে বুথস্তরের কর্মীদের সাথে মেলামেশা করে অসুবিধাগুলোকে দূর করেছেন এই বয়সে, তা অনেকেই পারবেন না। প্রচারে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কর্মীদের সাথে মেলামেশা এই বিধানসভার লিড বেড়ে যাবার অন্যতম কারণ। প্রায় ৩০০-এর ওপর বুথ। ৫টি গ্রামপঞ্চায়েতে ১০০-এর কাছাকাছি বুথ। সেখানেই লিড ১৭ হাজার বলে জানান তিনি’। তবে, শিল্পাঞ্চলের রাজনৈতিক মহলের স্পষ্ট ধারণা, বিজেপি ভোট গ্রহণের দিনই হেরে গিয়েছিলেন।
কারণ, এইবার লোকসভা উপনির্বাচন কেন্দ্রে প্রায় ২১০২ টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হয়। বিজেপি প্রায় ১১০০ বুথে পোলিং এজেন্ট দিতে অক্ষমতা দেখিয়েছে। শুধুমাত্র ৯০০+ বুথে বিজেপি পোলিং এজেন্ট দিতে পেরেছিলেন। বিজেপির এই লজ্জাজনক হার, তারই প্রতিফলন হয়েছে ভোট বাক্সে। গ্রামীণ অঞ্চলে বিজেপির সংগঠনের হাল যে অত্যন্ত খারাপ, তা নির্বাচনী বুথে এজেন্ট দিতে না পাড়া প্রমাণ করল লোকসভা উপনির্বাচনে।