বছর বাইশের মেঘা। আচমকা পিরিয়ডসের সময় প্রবল পেটে ব্যথা, কষ্ট। তার ওপর পিরিয়ডসও ছমাস ধরে হচ্ছে অনিয়মিত। ডাক্তার দেখাতেই আলট্রা সনোগ্রাফিতে ধরা পড়ল ওভারিতে রয়েছে একাধিক সিস্ট।
বছর ত্রিশের রাজশ্রী। এক বছর বিয়ে হয়েছে। তারপর থেকেই মোটা হতে শুরু করেছিলেন। প্রথমে সকলেই ভেবেছিলেন বিয়ের পরপরই বলে হচ্ছে এমনটা। কিন্তু তিন, চার বার অনিয়মিত পিরিয়ডের পর আচমকাই পিরিয়ড বন্ধ। প্রথমটাই মনে হয়েছিল প্রেগন্যান্সি নয়তো! কিন্তু পরীক্ষায় দেখা গেল পলি সিস্টিক ওভারি।
পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ (পিসিওডি) ও পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা পিসিওএস। কম বয়েসি থেকে মধ্যবয়স্ক মহিলা কম-বেশি অধিকাংশই ভুগছেন এই সমস্যায়।
কী এই পিসিওএস ও পিসিওডি?
স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের কথায়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে পলিসিস্টিক ওভারি হতে পারে। মেয়েদের শরীরে যখন পুরুষ হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় তখন ওভারির মধ্যে ছোট ছোট সিস্টের মতো দেখা যায়। পিসিওএস হলে কেউ কেউ কিছুটা মোটা হয়ে যায়, শরীরে লোমের পরিমাণ বেশি থাকে। অনিয়মিত পিরিয়ড বা পিরিয়ড একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও ঘটতে পারে। তাছাড়া আরও নানা শারীরিক সমস্যা হতে পারে। আজকাল ১০ জন টিএনএজ মেয়ের মধ্যে ৬ জনেরই পলিসিস্টিক ওভারি হচ্ছে।
পিসিওডি vs পিসিওএস
পিসিওডি পিসিওএস-এর তুলনায় কম জটিল। পিসিওডি-সাধারণত বেশি হয়। পিসিওএস-এ সিস্টের পরিমাণ তুলনায় বেশি থাকে। পিসিওডি- সাধারণত ফার্টিলিটি বা সন্তান উত্পাদনে প্রচণ্ড অসুবিধে করে না। কিন্তু পিসিওএস, প্রেগন্যন্সিতে বাধা হতে পারে অনেক সময়।
টিনএজ-এ অনেক মেয়ে খুব মোটা হয়ে যায় আজকাল। এর কারণ কী?
এখন বেশিরভাগ কমবয়সী মেয়ের মধ্যেই এই সমস্যা দেখা দেয়। হয় খুব মোটা হয়ে যায়, না হলে সারা মুখে গুটি গুটি ব্রন বের হতে দেখা যায়। মুখে অবাঞ্চিত চুল গজায়। মায়েদের বলতে শোনা যায়, তাঁরা কমবয়সে এমন ছিলেন না, কিন্তু এখন কৈশোরেই চেহারা ভারী হয়ে যাচ্ছে, ওজন বাড়ছে। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এর জন্য ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ দায়ী। এর জন্য পিরিয়ড সাইকেলও অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে।
ব্রণ, অ্যাকনে সমস্যা
পিসিওডি-র জন্য ব্রণ-র সমস্যা খুব হয়। কমবয়সীদের মেয়েদের পলিসিস্টিক ওভারি থাকলে সারা মুখে গুটি গুটি ব্রণ বের হতে দেখা যায়। অনিয়মিত পিরিয়ডস, অবাঞ্ছিত হেয়ার গ্রোথ, অ্যাকনের মতো সমস্যা তো আছেই।
আসলে পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ হলে মেয়েদের শরীরে পুরুষ হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে ত্বকের ধরনও ছেলেদের মতো কিছুটা হয়ে যায়। তৈলাক্ত ত্বক, থুতনির কাছে বা গালে লোম গজিয়ে ওঠা ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে নন-হরমোনাল কিছু ওষুধ দিয়ে ট্রিটমেন্ট করা হয়। এমন কিছু ওষুধ আছে যেগুলি দিলে হরমোনের ব্যালান্স বজায় থাকে, ফলে অতিরিক্ত ওজন বশে থাকে, ব্রণ বা ফেসিয়াল হেয়ারের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল নিয়মে আসে।
পিসিওএস কীভাবে আটকানো যায়?
ইদানীং জাঙ্ক ফুড বা প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। রোল, চাউমিন এসব রয়েছে। পাশাপাশি বার্গার-পিৎজা বেশি পছন্দ। অতিরিক্ত ঝাল, তেলমশলাদার খাবার খেলে পিসিওসের সমস্যা বাড়ে। তাছাড়া শরীরচর্চা জায়গাটা একেবারেই থাকে না। ফলে ওজন বাড়ে। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এছাড়া কোনও ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত স্ট্রেস, রাত জাগা, স্লিপ প্যাটার্নে বদল এসবের কারণেও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। যদি বাইরের খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার ঠিকমতো খাওয়া যায়, নিয়মিত হাল্কা এক্সারসাইজ করা যায়, তাহলে পিসিওএসের সমস্যা কিছুটা হলেও এড়ানো সম্ভব হবে।
ফার্টিলিটির সমস্যা
পিসিওএস থেকে সন্তান আসার ক্ষেত্রেও কখনও সমস্যা হয়। পলিসিস্টিক ওভারি থাকলে পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায়। ওভুলেশন হয় না মেয়েদের। ফলে জরায়ুতে ডিম ঠিকমতো তৈরি হয় না। তবে, যাদের শুধু পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ আছে, অন্য আর কোনও শারীরিক সমস্যা নেই, তাদের ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা হয়। পাশাপাশি ব্যায়াম, খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হয়।