কলকাতা: করোনার চিকিৎসায় রোগীর প্রাণ বাঁচাতে দুই পা হাঁটুর নীচ থেকে বাদ দিতে হয়েছিল চিকিৎসকদের। সেই চিকিৎসকদের জন্যই আবার হাসপাতাল থেকে নিজে হেঁটে বাড়ি ফিরবেন মধ্যবয়স্ক রিমা নন্দী দত্ত। এসএসকেএমের ডাক্তাররা মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করে সিদ্ধান্ত নেন যে কৃত্রিম পা বা প্রস্থেটিক পায়ের সাহায্যেই নতুন জীবন দেওয়া হবে রিমাকে। চিকিৎসার জোরেই এখন ধীরে ধীরে হাঁটেছন রিমা।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে করোনা চিকিৎসায় পা কেন বাদ গেল? এতদিন আমরা দেখে এসেছি করোনায় মূলক ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত থাকে। অনেক সময় হার্ট ও অন্য অঙ্গও। কিন্তু পা? জানা গিয়েছে, করোনা সংক্রমণ মহিলার দু’পায়ের ধমনীকে নষ্ট করে দিয়েছিল।সংক্রমণের পরেই দু’পায়ের আর্টারির মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে থাকে, ব্লকেজ হয়ে যায়। রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ায় পা অসাড় হতে থাকে। ডাক্তারি ভাষায় এই রোগকে বলে ‘আর্টেরিয়াল থ্রম্বোসিস’। একসময় অস্ত্রোপচার করে দু’পায়ের ক্ষতিগ্রস্থ অংশটুকু বাদ দিতে হয় এসএসকেএম-এর ডাক্তারদের।
পা বাদ যাওয়ার পরেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মহিলা। তাঁর কাউন্সেলিং শুরু হয়। এরপর এসএসকেএমের ডাক্তাররা মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করে সিদ্ধান্ত নেন যে কৃত্রিম পা বা প্রস্থেটিক পায়ের সাহায্যেই নতুন জীবন দেওয়া হবে রিমাকে। জার্মানি থেকে অত্যন্ত উন্নত এন্ডোস্কেলিটল প্রস্থেটিক পা আনানোর সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তারবাবুরা। এর জন্য খরচ হবে সাড়ে চার লাখ টাকা। নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলার এত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই এই টাকার জন্য স্বাস্থ্যভবনের কাছে অনুমোদন পাঠানো হয়।সরকারি অনুমোদন পেয়ে জার্মানি থেকে পা আনিয়ে অস্ত্রোপচার করে তা বসিয়ে দেন ডাক্তাররা। যে কোনও কৃত্রিম অঙ্গ শরীরের ট্রান্সপ্লান্ট করলে বা সংযুক্ত করলে প্রথমেই শরীর তা গ্রহণ করে না। অনেক সময় এই গ্রাফটিং প্রসেস সফল হয় না। এসএসকেএমের ডাক্তাররা বলছেন, অস্ত্রোপচার এতটাই নিখুঁত ছিল যে নকল পা ভালভাবেই জোড়া লেগে যায় এবং এর কোনও খারাপ প্রভাবও হয়নি। নিম্নবিত্ত পরিবারের এই মহিলাকে নতুন জীবন দিয়ে ফের সাফল্য ও মানবিকতার দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন এসএসকেএমের চিকিৎসকরা।
রিমা এখন সুস্থ। নকল পা নিয়ে হাঁটছেন তিনি। ডাক্তাররা বলেছেন, এখন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন রিমা। বাড়ির সব কাজকর্মও করতে পারবেন।