রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে ফের দিল্লি অভিযানের ডাক দিলেন মমতা। বৃহস্পতিবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের বিশেষ অধিবেশনে অংশ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী জানান, সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন তিনি নিজে দিল্লি গিয়ে আন্দোলন কর্মসূচিতে সামিল হবেন। দলীয় সাংসদ, বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে একশো দিনের কাজের টাকার দাবি জানাবেন। তিনি সময় না দিলে ফের পথে নেমে আন্দোলন করা হবে। ‘হয় টাকা দাও, নয়তো বিদায় নাও’, এই স্লোগান দিয়ে লাগাতার কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলন চলবে।
২৮ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তিনদিন দুই ঘণ্টা করে দলের বিধায়কদের বিধানসভার লনে বিআর আম্বেদকরের মূর্তির সামনে বাধ্যতামূলক ভাবে অবস্থানে বসতে তিনি নির্দেশ দেন। ২ এবং ৩ ডিসেম্বর বুথে বুথে রাজ্যের প্রাপ্য টাকার দাবিতে মিছিল, মিটিং করতে হবে। দলের সমস্ত শাখা সংগঠনকে একযোগে এই কর্মসূচিতে সামিল হতে হবে বলে নেত্রীর নির্দেশ।
মমতা বলেন, ‘বিজেপির আয়ু আর মাত্র তিন মাস। তারপর তাদের দিল্লি থেকে বিদায় নিতে হবে। আমি নিজে ডিসেম্বর মাসে দিল্লি যাব। আমাদের অবশ্য তিন মাস পর এমনিতেই দিল্লিতে পাকাপাকি ভাবে যেতে হবে। কারণ, দিল্লিতে বিজেপির সরকারটা আর থাকবে না। বিজেপিকে বিদায় জানানোর জন্য ইন্ডিয়া জোট করা হয়েছে।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অন্যায় ভাবে ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এটা কারও দয়ার টাকা নয়। রাজ্যের হকের টাকা। এই টাকা দিতেই হবে। মমতা বলেন, ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলে ভালো। না দিলে রাস্তাই আমাদের রাস্তা দেখাবে। অনেক মার খেয়েছি সিপিএম আমলে। দিল্লিতে না হয় আপনাদের হাতে একটু মার খেলাম। এমনিতেই তো আমরা জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছি।’ নেত্রী এদিন স্লোগানের বয়ানও ঠিক করে দেন।
লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল কী হবে, তা বাতলে দিতে এদিন এই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। সভায় মূল বক্তা ছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সভায় উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু চোখের সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাক্তাররা তাঁকে অন্তত দশদিন বিশ্রামে থাকতে বলেন। তাই তিনি সভায় থাকতে পারেননি। ভার্চুয়ালি কিছুক্ষণের জন্য হাজির ছিলেন অভিষেক। এদিনের সভায় নেত্রী বুঝিয়ে দেন, লোকসভা ভোটের প্রচারে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা, সড়ক যোজনার বকেয়া টাকার দাবিকেই পাখির চোখ করা হবে। সেইমতো তিনি কিছু কর্মসূচিও ঘোষণা করেন। এর আগে একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা, সড়ক যোজনার বকেয়া টাকার দাবিতে দিল্লিতে অভিষেকের নেতৃত্বে ধর্না হয়। দিল্লি থেকে ফিরে রাজভবনের সামনে টানা চারদিন অবস্থান চালান অভিষেকরা। সেই অবস্থান মঞ্চ থেকেই অভিষেক ঘোষণা করেছিলেন, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেখা হবে। তার মধ্যে টাকা না দিলে ১ নভেম্বর থেকে মমতার নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলন শুরু হবে দিল্লিতে। মমতা দিল্লির ধর্নার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়করা দিল্লিতে আন্দোলন করলেন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তাঁদের চার ঘণ্টা বসিয়ে রেখে পালিয়ে গেলেন। উল্টে আমাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করল দিল্লি পুলিশ।’ যদিও তাঁদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে দিল্লি পুলিশের দাবি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দপ্তর থেকে তাঁদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাতে সকলকে ছেড়ে দেওয়া হয়।