কৌশিক দে
মালদহের দুটি লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে চাকরি বাতিল ইস্যু নিয়ে সরব হলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। উত্তর এবং দক্ষিণ মালদার নির্বাচনী মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘মোদি যুবকদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। তাই ২৬ হাজার চাকরি হারাদের পাশে আমরা আছি। আগামীতে আইনের সাহায্য নিচ্ছি।’
রবিবার দুপুরে মালদার দুটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে প্রথম নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয় কালিয়াচক ১ ব্লকের সুজাপুর বিধানসভার কৃষক বাজার মাঠে। এদিন দুপুর দুটো নাগাদ ওই এলাকার নির্বাচনী মঞ্চে উঠেই দক্ষিণ মালদার তৃণমূল প্রার্থী শাহনাওয়াজ আলি রায়হানের সমর্থনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি আসন ভাগাভাগি করেছে। ওরা ভোট কাটাকাটির খেলায় মেতেছে। ভোট কাটাকাটি করে বিজেপিকে জেতাবেন না। তাহলেই আগামীতে গায়ের জোরে বিজেপি এনআরসি করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাবে। আমরা এরাজ্যে এনআরসি হতে দিব না। মালদার গঙ্গা ভাঙনে কোনও কাজ করেনি কেন্দ্র। অথচ আমরা মুর্শিদাবাদ ও মালদহের গঙ্গা ভাঙন এলাকায় প্রতিরোধের কাজ করেছি। আপনারা তৃণমূলকে ভোট দিন, তাহলে দেখবেন এই নির্বাচনেই মোদিবাবুর গদি উল্টে গিয়েছে। ’
এদিন সুজাপুরের নির্বাচনী সভায় দলীয় প্রার্থীকে সামনে রেখে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘গত বিধানসভা নির্বাচনে মালদা মুশিদাবাদের মানুষ ঢেলে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। ফলে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারেনি। মালদায় এতদিনেও তৃণমূল একটাও লোকসভার আসন পাইনি। এখানে কংগ্রেস, সিপিএম আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছে। আর ওরাই বিজেপিকে মদত যোগাচ্ছে। আপনারা ভোট কাটাকাটি হতে দেবেন না।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আমি ‘ইন্ডিয়া’ জোট নাম দিয়েছিলাম। কিন্তু এরাজ্যে কংগ্রেস সিপিএমকে নিয়েই বিজেপিকে সাহায্য করছে। তাই এই বাংলায় কোনও জোট নেই, তৃণমূল একাই লড়ছে। বলে রাখি আগামী দিনে তৃণমূলই ইন্ডিয়া জোটকে নেতৃত্ব দিবে। দিল্লিতে এবার আমাদের সরকার আসবে।’
তৃণমূল সুপ্রিম মমতা ব্যানার্জি এদিনের নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘সাংসদ মহুয়া মিত্র বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল বলেই ওকে পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। মোদিবাবু বুঝতে পেরেছেন ইন্ডিয়া জোটের তাদের কি লোকসান হতে পারে। তাই এখন ওরা কংগ্রেস ও সিপিএমকে নিয়ে ভোট কাটাকাটির রাজনীতির কৌশল করছে। বাংলা কারো কাছে আত্মসমর্পণ করে না। প্রায় ২৬ হাজার ছেলে মেয়ের চাকরি খেয়ে নেওয়ার পিছনেও মোদিজির হাত রয়েছে। আমরা মানুষের চাকরি খেতে দিব না। এর বিরুদ্ধে দেশের উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আইনের দ্বারস্থ হব।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, বিজেপি দেশ এবং সংবিধান বিক্রি করে দিবে। তাই কোনওভাবেই ওদের ভোট দেবেন না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধু বিজেপির বিজ্ঞাপনে রাজনীতি করছে। কোনো উন্নয়ন করতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধি হচ্ছে অথচ মালদহে এসে কিছুদিন আগেই মোদিবাবু অনেক বড় বড় ভাষণ দিয়ে গেলেন। উনি বলেছেন, বিনা পয়সায় নাকি রেশন দিচ্ছেন। রেশন দিচ্ছে রাজ্য সরকার, এক পয়সাও কেন্দ্র দেয় না। এই নির্বাচনটা হচ্ছে দিল্লিতে মোদিবাবুর গদি উল্টানো নির্বাচন ।
তৃণমূল সুপ্রিম আরো বলেন, বিজেপির দুটো চোখ। একটি কংগ্রেস অপরটি সিপিএম। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে আদিবাসী তপসিলি জাতি ও উপজাতির সমস্ত অস্তিত্ব ওরা অভিন্ন দেওয়ানী একটা আইনে উঠিয়ে দিতে চাইছে। হিন্দু ধর্ম কেউ বদনাম করছে বিজেপি। এরই বিরুদ্ধে লড়াই করছে তৃণমূল। বাম আমলে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য মাত্র ৪০০ কোটি টাকা খরচ হতো। আজকে সেই খরচের পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৬০০টি হোস্টেল আমরা তৈরি করেছি। যারা পার্লামেন্টে মালদহের সমস্যা নিয়ে মুখ খোলেনা তাদের ভোট দেবেন কেন। তাই এবারে আর বিজেপি কংগ্রেসকে একটিও ভোট নয়, তৃণমূলকে জয়ী করুন। তাহলেই দেখবেন ইন্ডিয়া জোটের মাধ্যমেই দিল্লি দখল করবো আমরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, মালদহের আমকে বিদেশের বাজারে রপ্তানি করার ক্ষেত্রেই তৃণমূল সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। কেন্দ্র কোনওরকম সহযোগিতা করেনি। এদিন নির্বাচনী মঞ্চ থেকে আরো একবার মালদায় দুটি লোকসভা আসন পাওয়ার ক্ষেত্রেও তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার আহবান জানান মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই কালিয়াচকের সুজাপুর এলাকার নির্বাচনী সভা শেষ করে উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন ব্যানার্জির সমর্থনে হবিবপুরেএ নির্বাচনী সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
ক্ষমা চাইলেন
এদিনের নির্বাচনী সভায় সুজাপুরের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, গত বিধানসভায় আধুল গনি সাহেব এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিল। তিনি কলকাতায় থাকেন। বিভিন্ন কাজে ব্যস্ততার কারণে সুজাপুরের সময় দেওয়া তার পক্ষে অনেকটাই সম্ভব হয়নি। তাই এবার থেকে সুজাপুরের সমস্ত সমস্যা এবং সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী তদারকি করবেন বলেও নির্বাচনী মঞ্চ থেকে জানিয়েছেন।