মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের তলব পেয়ে ব্যাংকের নথি নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন কলকাতার এক ব্যবাসায়ী। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতারই হোটেলের ঘরে আসতে বলা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু রাত ১২টা বেজে গেলেও বাড়ি ফেরেননি মিহির। ফোনও ছিল সুইচড অফ। তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে পুলিশে ফোন করেন ব্যবসায়ীর স্ত্রী। পুলিশ আসরে নামতেই জানা গেল আসল তথ্য। হোটেল থেকে উদ্ধার করা হল তাঁকে।
ফোন, সিবিআই-এর চিঠি, কথোপকথন সমস্তটা মিলিয়ে ছক এতটাই নিখুঁত ছিল যে, ঘোল খেয়ে গিয়েছিলেন ঝানু ব্যবসায়ীও। বালিগঞ্জের বাসিন্দা মিহির মেহতা। মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ-এর ফোন পেয়ে ও ফোনের ও প্রান্ত থেকে বলা কথা শুনে কোনও স¨েহই হয়নি তাঁর। তলব পেয়ে হুড়মুড়িয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ব্যবসায়ীও। মিহির বাড়িতে শুধু বলে যেতে পেরেছিলেন, ক্রাইম ব্রাঞ্চ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে। তাদের তলব পেয়েই বেরোচ্ছেন। সঙ্গে ছিল ব্যাঙ্কের সমস্ত নথিপত্রও।
দিন কয়েক আগে দক্ষিণ কলকাতার এই বালিগঞ্জ এলাকা থেকেই ব্যবসায়ী ভব্য লাখানি একটি অজানা ফোন পেয়ে নিমতায় গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। পরে নিমতা থেকেই তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মিহিরের বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। প্রথমে তাঁর কল রেকর্ড দেখা হয়। তার পরে তাঁর মোবাইলের শেষ লোকেশনের সূত্র ধরে মিহিরকে খুঁজে বার করে বালিগঞ্জেরই একটি হোটেলের ৪০১ নম্বর রুম থেকে।
জানা গিয়েছে, পুলিশ যখন হোটেলে পৌঁছয় ব্যবসায়ী মিহির মেহেতা তখন হোটেলের ঘরে অনলাইনে ভিডিয়ো কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন। তিনি জানতে, কনফারেন্সে রয়েছে ‘মুম্বই পুলিশ’-এর কোনও এক ব্যক্তি। তবে তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে পুরোটাই একটা প্রতারণা চক্র। জানা গিয়েছে, প্রতারণাকারীরা সিবিআইয়ের একটি চিঠিও দেখায় মিহিরকে। তাঁকে বলা হয় তাঁর নামে আসা পার্সেল হাতে এসেছে সিবিআইয়ের। সেই মর্মেই তাঁকে অনলাইনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ক্রাইমব্রাঞ্চ।
অনলাইনে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলেই মিহিরকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোনও হোটেলরুমে আসতে বলেছিলেন প্রতারণাকারীরা। সন্ত্রস্ত মিহির সেই আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। পরে হোটেলের ঘরে ঢোকার পর সুইচড অফ করে দিতে বলা হয় তাঁর ফোন। যার ফলে সম্পূর্ণ ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যান মিহির।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মিহিরকে যখন উদ্ধার করা হয় তখন তাঁর প্যান কার্ড, আধার কার্ড এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিশদ তথ্য চলে গিয়েছে প্রতারণাকারীদের হাতে। তার সাহায্যে প্রতারকেরা মিহিরের অ্যাকাউন্ট থেকে বড় অঙ্কের অর্থ সরিয়ে ফেলতেও পারতেন। কিন্তু পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করায় বড় রকমের ক্ষতি আটকানো যায়। অভিযোগ পাওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে মিহিরকে উদ্ধার করে পুলিশ।