টোটোয় চড়ে দুর্গাপুর ভ্রমণ হনুমানের!

নিজস্ব প্রতিবেদন ,দুর্গাপুর: টোটো চালকের সঙ্গে টোটোয় চড়ে টো-টো করে ঘুরে বেড়ানোই নেশা বজরংজির (হনুমান)। এমনই নজিরবিহীন দৃশ্য ধরা পড়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে।
যাত্রীবাহী একটি টোটোয় নিত্যদিন একটি হনুমানকে চড়ে বসে থাকতে দেখেন পথচারী থেকে যাত্রীরা। ওই টোটোতে বসেই স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করছেন আবার যাত্রীরাও। তবে যাত্রীদের তো একটা গন্তব্য রয়েছে। কিন্তু বজরংজির গন্তব্য বলে কিছুই নেই। সকাল থেকে টোটোয় চড়াই তার শখ। টোটো দাঁড় করিয়ে রাখলেই মেজাজ হারায় সে। টোটোয় চেপে আশপাশের এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। ওই টোটোতে যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করতেই সে লাফিয়ে এসে তার সিটের দখল নেয়। যাত্রী থেকে পথচারীরা তাকে মাঝেমধ্যেই খাবার খাওয়ায়, আদর করেন। আবার গলা জড়িয়ে ধরলেই আশীর্বাদ করার ভঙ্গিতে মাথায় দু’হাত তুলে দেয়। স্বয়ং বজরঙ্গবলীর আশীর্বাদ নিতে পথেঘাটে টোটো দাঁড় করিয়ে দেন অনেক ভক্তই। পথচারীরা আবার ভিড় করে দাঁড়িয়ে বজরঙ্গজিকে প্রণামও করেন।
টোটো চালক মুকেশ দত্তের দাবি, ওই হনুমানটিকে সঙ্গে নিয়ে টোটোর যাত্রা শুরু করলে বৌনিটাও বেশ ভালোই হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাবেই চলে আসছে মুকেশ ও বজরঙ্গজির অটুট সম্পর্ক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর এক নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর এলাকার বাসিন্দা মুকেশ দত্ত। তিনি পেশায় টোটোচালক।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় প্রায়ই হনুমানের দল আসে। কয়েক মাস আগে ওই দল থেকে একটা প্রাপ্তবয়স্ক হনুমান দল ছুট হয়ে যায়। আমাদের এলাকায় সে একাই ঘোরাঘুরি শুরু করে। এলাকার বাসিন্দা সহ আমিও তাকে খাবার খাওয়াতাম। একদিন দেখি আমি টোটো নিয়ে রোজগারের জন্য বের হতেই আমার টোটোর সিটে এসে বসে ওই হনুমানটি। আমি তাকে টোটো থেকে নামানোর জন্য অনেক কৌশল করি। কিন্তু তাকে নামাতে না পেরে আমি চিন্তায় পড়ে যাই, আর হয়তো কোনও যাত্রী আমার টোটোই চড়বেন না। হনুমানটিকে দেখে ভয় পাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও উপায় না পেয়ে হনুমানটিকে টোটোয় করে এলাকায় ঘোরাতে বেরতেই রাস্তায় দু’জন যাত্রী মেলে। আমার মনে ভয় হলেও, বজরংজি যাত্রীদের কোনও সমস্যা করেনি। কৌতুহলী যাত্রীরাও বজরংজির বিষয়ে নানান প্রশ্ন আমায় করতে থাকে। ওই দিন রোজগারও বেশ ভালোই হয়। এর পর দিনও হনুমানটি টোটো বের করতেই আবার আমার টোটোতে চড়ে ঘুরতে বেরিয়ে যায়। এই ভাবেই চলতে থাকে। আমার অর্থ উপার্জনও বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রী থেকে পথচারীরা সবাই বজরংজির কাছে নাথা নত করে আশীর্বাদও নেয়। কারও কোনও ক্ষতি করেনি। আর যে যা খাবার দেয় সে খায়। টোটো করে ঘুরে বেড়ানো তার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমানে। এলাকায় ফিরে এসে সে নিজের মতো ফের ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।’
স্থানীয় এক পথচারী সুভাষ বোষ বলেন, ‘দেখে অবাক লাগছে যে হনুমান আবার টোটোর যাত্রী। প্রায়ই দেখি যাত্রী সহ ওই হনুমানটি টোটোতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা শুনেছি হনুমানের বাচ্চা যখন মায়ের কোল থেকে নীচে পড়ে যায়। তখন তার মা বা হনুমানের দল তাকে আর সঙ্গে নেয় না। সেই বাচ্চা হনুমানটি লোকালয়ে বেড়ে ওঠে। সেই সময় সে মানুষের মতো চালচলন শুরু করে। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে অনুমান করছি। টোটোতে বসে যাচ্ছে তো মনে হচ্ছে মানুষের মতো অবিকল এক যাত্রী যাচ্ছে। নজিরবিহীন দৃশ্য একেবারেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × three =