বাঁকুড়া : প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়াল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক শ্যামল সাঁতরার। বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর নাম নিয়ে গুঞ্জন চলছিল, এবার সিবিআই তদন্তে সেই সন্দেহ আরও দৃঢ় হল। অভিযোগ, ২২ জনের চাকরি হয়েছিল শ্যামল সাঁতরার সুপারিশে, যা সিবিআইয়ের তালিকায় উঠে এসেছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই তদন্তের দাবি তুলেছে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
সিবিআই তদন্তে উঠে এসেছে, ৩২৪ জন প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি হয়েছিল শাসকদলের একাধিক প্রভাবশালীর সুপারিশে, যার মধ্যে ২২ জন সরাসরি শ্যামল সাঁতরার সুপারিশে চাকরি পেয়েছেন। তালিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই বিষয়টি নিয়ে তীব্র চর্চা শুরু হয়। বিরোধী দলগুলি দাবি করেছে, কোনও সুপারিশের ভিত্তিতে, কত টাকার বিনিময়ে এই চাকরিগুলি হয়েছিল, তা স্পষ্ট করা দরকার।
বিজেপি সিবিআইকে অনুরোধ জানিয়েছে, শ্যামল সাঁতরা কাদের নির্দেশে এই সুপারিশ করেছিলেন, তাঁর তদন্ত হওয়া উচিত। অন্যদিকে বামফ্রন্টের দাবি, গোটা নিয়োগ দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে অভিযুক্তদের শাস্তি দিতে হবে।তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। দলীয় নেতাদের দাবি, বাম আমলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি আরও বেশি ছিল, এখন তারাই দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে।
অভিযুক্ত শ্যামল সাঁতরা অবশ্য সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, এটি বিরোধীদের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, “২০২৬ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তফশিলি সম্প্রদায়ের নেতা হওয়ার কারণেই আমাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তবে সিবিআই ডাকলে আমি তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করব।”
বাঁকুড়াবাসীর মতে, যখন একজনের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তখন তাঁকে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সর্বোচ্চ পদে বসানো উচিত হয়নি। শ্যামল সাঁতরার নিয়োগ প্রসঙ্গে বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি ও সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী মন্তব্য করেছিলেন, “আপদ বিদায় হল। তাই এটি গৌরবের দিন, আনন্দের দিন।” তাঁর এই বক্তব্য নিয়েও রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোচনা চলছে।
এদিকে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে রানীবাঁধে সিপিএমের পক্ষ থেকে পোস্টারিং করা হয়েছে। তাদের দাবি, যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি করা হয়েছে, যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। অন্যদিকে, তৃণমূল নেতারা পাল্টা বলেছেন, বাম আমলে ব্যাপক চুরি হয়েছে, এখন তারাই আমাদের চোর বলছে।
এই দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআই পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেয়, তা নিয়ে এখন জেলায় চরম উত্তেজনা চলছে।