মান্টি বন্দোপাধ্যায়, বর্ধমান
আউশগ্রামের নাগরপোঁতার জঙ্গলে রাজকন্যা ও গোপকিশোরের অসমাপ্ত প্রেম কাহিনির কথা এখনও অনেকের অজানা। দু’জনের প্রেমের পরিণতি না হওয়ার করুণ কাহিনি আজও জঙ্গলের গাছ গাছালিরা জানান দেয়। এলাকার অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, রাজকন্যা ও গোপকিশোরের প্রেমের সমাধিতে নাকি গাছের পাতা চাপিয়ে দিলে তাঁদের আর্শীবাদ পাওয়া যায়। তাই আজকের দিনে বহু প্রেমিক -প্রেমিকা আসেন গাছের পাতা নিয়ে, যাতে তাঁদের ভালোবাসা পরিণতি পায়।
জানা গিয়েছে, আউশগ্রাম ২নং ব্লকের দেবশালা এলাকায় রয়েছে নাগরপোঁতা জঙ্গল। জনশ্রুতি, এলাকাটি তখন গোপভূম নামে পরিচিত ছিল। সেখানে একসময় সামন্ত রাজা বাস করতেন। তাঁর এক কন্যা ছিল। রাজকন্যা অত্যন্ত সুন্দরী হওয়ায় রাজা তাঁকে রাজমহলের বাইরে খুব একটা বের হতে দিতেন না। রাজমহলের অন্দরে বাইরের কোনও এক কিশোরের বাঁশির সুর শুনে রাজকন্যার মন উতলা হয়ে উঠত। অস্থির হয়ে উঠতেন তিনি। কে এই বাঁশি বাজাত , তা জানতে বড্ড কৌতূহলী ছিলেন রাজকন্যা।
একদিন স্থানীয় এক গোয়ালা অসুস্থ থাকায় তাঁর ছেলে দুধ নিয়ে রাজবাড়ি গেলেন। তাঁর হাতে ছিল বাঁশি। নাম তাঁর গোপকিশোর। প্রথম দর্শনেই বাঁশি দেখে রাজকন্যা বুঝে যান, এই বাঁশির সুরই তাঁর মনকে উতলা করে। গোপকিশোরকে রাজকন্যা ভালোবেসে ফেলেন। এরপর গোপকিশোর প্রতিদিন দুধ নিয়ে রাজবাড়ি আসতেন। এভাবেই রাজকন্যার সঙ্গে তার প্রেম গভীর হতে থাকে। দু’জনের প্রেমের কথা জানাজানি হতেই রাজকন্যা গোপকিশোরকে নিয়ে রাজবাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তাঁদের পালানোর কথা রাজা জানতে পারায় সৈন্যদের নির্দেশ দেন, তাঁদের দু’জনকে যেখানেই দেখতে পাবে, সেখানেই মেরে পুঁতে দিতে।
জঙ্গলের মধ্যে রাজার লেঠেল বাহিনীর হাতে রাজকন্যা ও গোপকিশোর ধরাও পড়ে যায়। তাঁদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সেখানেই সমাধিস্থ করা হয়। সেই থেকেই স্থানীয়দের কাছে ওই জঙ্গল নাগরপোঁতার জঙ্গল নামে পরিচিত হয়ে যায়। আজও প্রেমের সেই অমর কাহিনির সমাধিতে ভালোবাসা দিবস পালন করতে আসেন অনেকে। এই প্রেমের সমাধির ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখতেই ভ্যালেন্টাইন ডে’ উপলক্ষে সাংßৃñতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন স্থানীয়রা।