‘সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা করবেন না’, নাম না করে সন্দেশখালি ইস্যুতে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা মমতার

মহিলাদের মেজাজ, শাসকনেতাদের কোণঠাসা করে রাখা, লাগাতার আন্দোলন; বিবিধ সূচকে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই নন্দীগ্রামের সঙ্গে সন্দেশখালির তুলনা করছেন। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি সন্দেশখালিকে যে নন্দীগ্রামের সমপর্যায়ের আন্দোলনে রূপান্তরিত করতে চাইছে, তা তাদের বিভিন্ন নেতার মন্তব্য এবং বক্তব্যে স্পষ্ট। বুধবার বাঁকুড়ার খাতড়ার সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি থেকে সে ব্যাপারে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঁকুড়ার প্রশাসনিক সভা থেকে মমতা বলেন, ‘সিঙ্গুর-সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম-নন্দীগ্রাম, খাতড়া-খাতড়া। একটার সঙ্গে আর একটার তুলনা করবেন না।’

বঙ্গ সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সময় পর্যন্ত সন্দেশখালির অশান্তি ইস্যুকে জিইয়ে রাখতে হবে। তাই দিল্লি থেকে ইন্ধন জোগানো হচ্ছে। এই দাবি করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। আবার বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের মুখে বার বার ‘সন্দেশখালি দ্বিতীয় নন্দীগ্রাম’ মন্তব্যও শোনা গিয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, অশান্তিতে যে উস্কানি দিচ্ছে গেরুয়া শিবির, তা যেন বেশ খানিকটা এই কথাতেই স্পষ্ট। বুধবার সন্দেশখালির নাম উল্লেখ না করলেও সেই ষড়যন্ত্রে তত্ত্ব আরও একবার উস্কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি জায়গার সঙ্গে আরেকটি জায়গার নাম জড়িয়ে ‘দাঙ্গা’ বাঁধানোর কথা ভাববেন না বলেও পরামর্শ তাঁর।

সন্দেশখালির নাম উল্লেখ না করলেও বুধবার মমতা বলেন, ‘সিঙ্গুর হল সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম হল নন্দীগ্রাম, এক এক জায়গার এক একটা আলাদা আলাদা চেহারা মনে রাখবেন, একটার সঙ্গে আর একটার তুলনা করে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিয়ে ভুল করবেন না। কোথাও রক্ত ঝরুক আমি চাই না।’ জ্ঞানত তিনি কোনও ভুলকে প্রশ্রয় দেন না বলেও জানান মমতা।

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরাই ষড়যন্ত্র করে সন্দেশখালিতে অস্থিরতা জিইয়ে রাখছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, নন্দীগ্রাম ও সন্দেশখালির বিতর্কের প্রেক্ষাপট বেশ আলাদা। নন্দীগ্রামে চাষের জমি জোর করে অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল সরকার। সন্দেশখালিতে সেই পরিস্থিতি নয়। অর্থাৎ সন্দেশখালি কাণ্ডের সঙ্গে নন্দীগ্রামের তুলনা টানা মোটেও ঠিক নয়। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সন্দেশখালির নাম না করেও তেমনই ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিকমহল।

এদিনের সভায় বক্তব্য রাখার সময় বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা। পাশাপাশি তৃণমূল সরকার গবির মানুষের জন্য কী কী করেছে তা বলেছেন। এবং সেই কাজে কেন্দ্রের বাধার অভিযোগও তুলেছেন। সন্দেশখালির নাম না দিলেও সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের সঙ্গে কোনও জায়গার তুলনা হয় না বলেও জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বিজেপি বলে বেড়ায় আমি দিচ্ছি তুমি কি দিচ্ছ? নির্বাচন এলে উজালা। নির্বাচনের পরে ওটা হাজোলা, বিজোলা। ভোটের আগে ব্যাংকে ১৫ লক্ষ টাকা। এক হাজার টাকার গ্যাসে ফুটছে বিনা পয়সার চাল। নির্বাচন এলে গ্যাসের দাম ২০০ টাকা কমিয়ে দেয়। নির্বাচন পেরোলে ৪০০ টাকা বাড়িয়ে দেয়। কেরোসিনের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। একশো দিনের কাজের টাকা দেয় না। তারা গরিব লোক। পোর্টাল সেন্ট্রাল গর্ভমেন্টের। পোর্টাল আমাদের ছিল না। তাই কত মানুষ টাকা পায়নি তা জানা ছিল না। আসলে টাকা না পাওয়া লোকের সংখ্যা ২১ লাখ নয় ৬৯ লাখ। খাটিয়ে নিয়ে পয়সা দেয়নি। তাঁদের বঞ্চিত করেছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − 5 =