সুমন তালুকদার
গত ২৪ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে দলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে সমন্বয়ের বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকে শাসকদলে কী তোলপাড় চলেছে, তা সর্বজনবিদিত। নেতাজি ইন্ডোরের সভার ৩৪ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার প্রকাশ্য কর্মসূচি থেকে ফের এক বার নবীন-প্রবীণ বিবাদ মেটানোর বার্তা দিলেন মমতা। পাশাপাশিই উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতেও কড়া বার্তা দিয়েছেন মমতা।
এদিন চাকলার লোকনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে সরকারি অনুষ্ঠান সেরে কর্মীসভায় বক্তব্য রাখের দলনেত্রী। সেখানেই তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ কেউকেটা হয়ে গিয়েছে, পার্টির কথা মনে রাখছে না। এটা করা যাবে না। দলের পুরনো কর্মীদের সম্মান দিতে হবে। পুরনো কর্মীরা যেমন দলের সম্পদ তেমনি নতুন কর্মীরাও দলের সম্পদ। সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। কোনওরকম দ্বন্দ্ব রেয়াত করা হবে না। নতুন যেমন দরকার, পুরোনোদেরও রাখতে হবে। ছোটো-বড় কেউ নিজে ঠিক করে না। দুর্দিনে যারা মানুষের পাশে থাকবে তারাই দলের সঠিক কর্মী।’ মন্ত্রীদের বেশি করে এলাকা ঘোরার নির্দেশ দেন।
নীচু তলার কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে চায়ের দোকানে বসে মানুষের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে হবে।’ পাশাপাশি এদিন তিনি বিরোধীদের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আসলেই বিজেপি প্রতিশ্রুতি দেয়, ধর্মের খেলা খেলে। আমরা যা বলি সেটা রক্ষা করি। বিজেপির মতো মিথ্যে ভাওতা দি না।’ সিএএ ও নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে এদিন আবারও তিনি বলেন, ‘আপনারা সকলেই নাগরিক। তা না হলে কিভাবে রেশন পাচ্ছেন, স্বাস্থ্যসাথী, লক্ষ্মীরভান্ডার পাচ্ছেন, ভোট দিচ্ছেন। রাজনীতি করার জন্য জেলাশাসকদের হাত থেকে নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভোট আসছে তাই আবার একটা ছলনা করছে বিজেপি। ভয় পাবেন না, আমি আছি আপনাদের পাশে। গোটা তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা আছে। উদ্বাস্তু কলোনিতে আমরা পাট্টা দিচিছ। ওরা ডাকাতদের সর্দার। এক একজন কোটি টাকার মালিক। বিজেপি করলেই ওয়াশিং মেশিন, তৃণমূল করলেই চোর? এজেন্সির গণতন্ত্র চলছে। আজ আছে কাল থাকবে না। ইন্ডিয়া জোট সারা ভারতে থাকবে, আর বাংলায় তৃণমূল থাকবে। অন্য কোনও দল নয়।’
এদিন তিনি বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বালুকে গ্রেপ্তার করেছে যাতে, সে পার্টির কাজ করতে না পারে। ওরা সারাদেশে সকল ধর্মের মানুষের উপর অত্যাচার করছে। ১৫০ জন সাংসদকে বহিষ্কার করেছে, যা কোনওদিন হয়নি। যা চলছে তা হল সন্ত্রাস, অত্যাচার।’ এদিন মমতা বলেন, ‘২০০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করে দিয়েও এখন বলছেন হবে না। এই টাকা বিজেপি নেতাদের ঘরে তুলে রেখেছে। তৃণমূল ধর্ম নিয়ে কোনও ভেদাভেদ করে না। কিন্তু কেউ যদি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে সেটা চলবে না। বসন্তের কোকিল এসেছে। সংখ্যালঘুরা সাবধান। বাংলাকে তৃণমূলের হাতে রাখতে হবে। বিজেপি জিতলে অত্যাচার হবে। আমাদের ভুল বুঝবেন না। আপনাদের কেউ ক্ষতি করার চেষ্টা করলে আমি পাহারাদার হয়ে থাকবো। আমি পাহারাদার ছিলাম, আছি, থাকবো।’