পিকনিকে ব্যস্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্য পরিষেবা বন্ধ রাখার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদন, অণ্ডাল: স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ইন্ডোরে ভর্তি রয়েছেন প্রসূতি, আউটডোরে চিকিৎসকের অপেক্ষায় রয়েছেন রোগী, সে সময় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা বর্ষবরণের পিকনিকে ব্যস্ত বলে অভিযোগ। খান্দরা ব্লক গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সোমবার এমনই দৃশ্য দেখা যায় বলে দাবি।
সোমবার ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ বরণের দিন। প্রতি বছরই এই দিনটিতে পার্কগুলিতে থাকে ভিড়। অনেকে বেরিয়ে পড়েন পিকনিকে। কিন্তু চালু থাকে জরুরি পরিষেবা। বর্ষবরণের দিন কিন্তু অণ্ডাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (খান্দরা) দেখা গেল অন্য ছবি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ইন্ডোরে ভর্তি রয়েছেন প্রসূতি, আউটডোরে চিকিৎসকের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন রোগীরা। অথচ চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা গরহাজির বলে অভিযোগ। আউটডোরে বেশ কিছু রোগী দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান বলে দাবি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যস্ত রয়েছেন পিকনিকে। অভিযোগ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তিনতলায় তখন চলছে ভুরিভোজের আয়োজন। ক্যাটারিংয়ের দল ব্যস্ত রান্নার কাজে। বেলা দেড়টার পর শুরু হয় খাওয়া-দাওয়ার পর্ব। রীতিমতো কব্জি ডুবিয়ে মধ্যাহ্নভোজন সারেন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। টেবিলে সাজানো বেগুনি, ভাত, ভেজ সবজি, মিক্স মুগ ডাল, মাছ, মটন কারি, চাটনি, পাপড়, মিষ্টিতে জমজমাট পিকনিক।
ক্যাটারিংয়ের দায়িত্বে থাকা এক কর্মীর থেকে জানা যায়, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে মোট ৩০ জনের জন্য এই আয়োজন। খাওয়ার পর্বের মাঝপথে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের উপস্থিতি দেখে কেউ কেউ খাওয়া ছেড়ে উঠেও যান। কেউ কেউ অনুরোধ করেন ছবি না তোলার জন্য, খবর না করার জন্য। তিনতলার ওপর পিকনিকের যখন এই দৃশ্য, তখন একতলার ইন্ডোরে এক প্রসূতি মহিলার দাবি, দুপুরে তা¥কে পাউরুটি ও সবজি দেওয়া হয়েছে মধ্যাহ্নভোজনের জন্য।
অন্য রোগীদের সঙ্গে শিশুকন্যাকে নিয়ে আউটডোরে তখন অপেক্ষায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক দাবি করেন, ‘৩০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে রয়েছি, কোনও চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীর দেখাও পাচ্ছি না।’ দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর ওই অভিভাবকের মতো আরও বেশ কয়েকজন হতাশ হয়ে ফিরে যান স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে।
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এরকম আচরণের সমালোচনায় সরব হয়েছেন রোগীর আত্মীয় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। পশ্চিম বর্ধমান জেলা বিজেপির নেতা ছোটন চক্রবর্তীর দাবি, রাজ্যে মেলা, খেলার সরকার চলছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পরিষেবা বন্ধ রেখে চিকিৎসকদের পিকনিকের ঘটনায় তা আরও একবার প্রমাণ হল বলে দাবি তাঁর। অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ মোঃ ইউসুফ জানান, চিকিৎসা কেন্দ্রের ভেতর পিকনিক করাটা ঠিক হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। অণ্ডাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিএমওএইচ পরিতোষ সোরেনের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য তাঁর মোবাইলে ফোন করা সত্ত্বেও তিনি ফোন ধরেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × 5 =