বডি শেমিং। বিষয়টা কী? কারও শরীরে যদি খুঁত থাকে তাই নিয়ে পরিহাস করা নয়তো, সেই খুঁত নিয়ে বারবার কথা বলা।ভাবছেন বিষয়টা কী এমন? ল্যাংড়াকে ল্যাংড়া, কানাকে কানা বলা যাবে না? কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন, শারীরিক ত্রুটি নিয়ে যাঁকে বলা হচ্ছে বিষয়টা তার কাছে ঠিক কেমন লাগে?
বছর ২২-এর সৌরভ। ছোটখাটো চেহারা। একেবারেই রোগা। তা নিয়ে যেন মাথা ব্যথার শেষ নেই পড়শি থেকে বন্ধুদের। দেখলেই তাদের কখা, কী করে খাস না? ফু দিলে তো উড়ে যাবি। কলেজে বন্ধুরাতো এখন বান্ধবী জুটবে না বা যৌন জীবন নিয়ে অন্যরকম ইঙ্গিত করেও ক্ষ্যাপায়। তার জন্যই প্রথমে অতিরিক্ত খাওয়া শুরু করে সৌরভ। ফল? পেটের সমস্যা দেখা দিয়েছে তার। তারওপর মোটা হওয়ার ওষুধ খেতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে।
সমস্যাটা অন্য রকম দিশার। টাইফয়েডে চুল পড়ে গেছে। ডাক্তার দেখিয়েও লাভ হয়নি। এমনিতে মিষ্টি মুখ। কিন্তু কম বয়েসি মেয়ের চুল না থাকায় নানা রকম কথা শুনতে হচ্ছে তার। সেই ভয়ে এখন ঘর থেকে বের হতে চায় না সে।
কেউ হয়তো লম্বা, কেউ বেঁটে। কারও আবার স্তন বেশি ভারী। কারও খুব ছোট। কারও হাতগুলো মোটা, পা সরু। এ সব নিয়েই আমাদের সমাজে চলতে থাকে চর্চা। ‘বডি শেমিং’ হল এভাবে শারীরিক ত্রুটি নিয়ে হাসি-মশকরা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায়, ক্রমাগত কারও শারীরিক ত্রুটি নিয়ে বিদ্রূপ মারাত্মক। গভীর ডিপ্রেশনে চলে যান সেই মানুষটি। আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকে। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
ফি-বছর এ রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজে সাইকিয়াট্রিক বিভাগে অগুনতি রোগী আসেন বডি শেমিংয়ের শিকার হয়ে। আর যাঁরা আসেন না?আন্তর্জাতিক ল্যানসেট ম্যাগাজিনের একটি সমীক্ষা বলছে, বিশ্বে প্রতি ১০ জন আত্মহত্যাকারী মহিলার মধ্যে ৪ জনই এই দেশের। এই আত্মহত্যার নেপথ্যে অন্যতম যে কারণ থাকে, তার মধ্যে দু’নম্বরে বডি শেমিং। শারীরিকভাবে বিদ্রুপ করার ফলে অনেকেই আত্মহত্যাকে বেছে নেন।
মনোরোগ চিকিত্সকরা বলছেন, কারও গায়ের রং কালো। কারও মাথায় চুল কম, কিংবা কান দুটো বড়, কেউ হয়তো একেবারে রোগা।এমন মানুষরা ‘ডিসমরফিক ডিসঅর্ডারে’ আক্রান্ত। এই অসুখের উপসর্গ কী? কেউ দিনের সিংহভাগ সময় আয়নার সামনে কাটান। বারবার দেখেন তাঁর চেহারাটা পাঁচ জনের সামনে কেমন লাগছে। লজ্জায় অনেকে সামাজিক মেলামেশা এড়িয়ে যান। নিজেকে লুকিয়ে রাখেন।
এখানে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কী?এক একজনের চোখে তা এক একরকম। কিন্তু সেই পছন্দের সঙ্গে না মিললেই কাউকে অসুন্দর বলা তার কোনও ত্রুটি নিয়ে আঙুল তোলা, সেটাও বোধহয় একরকম ব্যাধি!
মনোবিদদের কথায়, বহিরঙ্গ দিয়ে মানুষকে বিচার করা অনুচিত। অভিভাবকদের উচিত ছোট থেকেই সন্তানকে শেখানো, মানুষকে তার ব্যবহার দিয়ে বিচার করতে হবে। অসুখে চুল পড়ে যাচ্ছে স্ত্রীর। তাঁকে নিয়ে হাসি-মশকরা করার জন্য সঞ্চালককে সপাটে থাপ্পড় মেরেছেন হলিউড অভিনেতা উইল স্মিথ। অস্কার মঞ্চে সাড়া ফেলেছে ঘটনাটি।উইল স্মিথের সপাটে থাপ্পড়কে জরুরি বলছেন মনোবিদরা।
কিছুদিন আগে দিল্লির এক বাইশ বছরের ফ্যাশন ডিজাইনার আত্মহত্যা করেন। তাঁর শেষ চিঠিতে লেখা ছিল ‘বডি শেমিংয়ের জন্যেই এই আত্মহত্যা।’