বাগডোগরা : ভারতকে বিকশিত করতে হলে দেশের সুষম উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জোর দিয়ে বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমি বলেছিলাম ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। ভারতকে বিকশিত করতে হলে দেশের সুষম উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই চেতনায়, গত দশকে আমাদের সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। আমরা ‘অ্যাক্ট ফাস্ট’-এর চিন্তাভাবনা নিয়ে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’-এর সমাধানে কাজ করছি।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বাগডোগরা থেকে ভার্চুয়ালি সিকিমের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং ও সিকিমের রাজ্যপাল ওম প্রকাশ মাথুর সিকিমের প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে স্মারক মুদ্রা ও ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আজ একটি বিশেষ দিন — যেহেতু আমরা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অংশ হিসেবে সিকিমের যাত্রার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি। আমি সত্যিই এই ঐতিহাসিক যাত্রার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের অংশ হতে চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত, আবহাওয়ার কারণে, আমি আপনাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকতে পারছি না।” প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “৫০ বছর আগে সিকিম নিজের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বেছে নিয়েছিল। সিকিমের মানুষ ভূগোলের পাশাপাশি ভারতের আত্মার সঙ্গেও সংযোগ স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। একটা বিশ্বাস ছিল, যখন সকলের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে এবং সকলের অধিকার সুরক্ষিত হবে, তখন উন্নয়নের সমান সুযোগ পাওয়া যাবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “সিকিম-সহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চল নতুন ভারতের উন্নয়নের গল্পে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে উঠছে। যেখানে একসময় দিল্লি থেকে দূরত্ব উন্নয়নের পথে প্রাচীর ছিল, এখন সেখান থেকে উন্নয়নের নতুন দরজা খুলে যাচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ হল এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন। আপনারা সকলেই নিজের চোখে এই পরিবর্তনগুলি ঘটতে দেখেছেন। একটা সময় ছিল যখন চাকরি, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবার জন্য ভ্রমণ করা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু গত দশকে সেই চিত্র উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। শুধুমাত্র সিকিমেই প্রায় ৪০০ কিলোমিটার নতুন জাতীয় মহাসড়ক নির্মিত হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি নতুন রাস্তা নির্মিত হয়েছে। অটল সেতুর মাধ্যমে সিকিম এবং দার্জিলিংয়ের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, “এখানে প্রকৃতি, আধ্যাত্মিকতা, হ্রদ, জলপ্রপাত এবং শান্তির ছায়ায় অবস্থিত বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যানও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। শুধু ভারত নয়, সমগ্র বিশ্ব সিকিমের ঐতিহ্যের জন্য গর্বিত। এখন যখন এখানে একটি নতুন স্কাইওয়াক নির্মিত হচ্ছে, তখন সুবর্ণ জয়ন্তী প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে, অটলজির মূর্তি উন্মোচন করা হচ্ছে। এই সমস্ত প্রকল্প সিকিমের নতুন উড়ানের প্রতীক।” প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “সিকিমের আপনারা সবাই পর্যটনের শক্তি জানেন এবং বোঝেন। পর্যটন কেবল বিনোদন নয়, এটি বৈচিত্র্যের উদযাপনও। কিন্তু পহেলগামে সন্ত্রাসীরা যা করেছে। এটি কেবল ভারতীয়দের উপর আক্রমণ ছিল না। এটি মানবতার আত্মার উপর আক্রমণ ছিল, ভ্রাতৃত্বের চেতনার উপর আক্রমণ ছিল। সন্ত্রাসীরা আমাদের অনেক পরিবারের সুখ কেড়ে নিয়েছে। তারা আমাদের ভারতীয়দের বিভক্ত করার ষড়যন্ত্রও করেছিল। কিন্তু এখন গোটা বিশ্ব দেখছে, ভারত আগের চেয়েও বেশি ঐক্যবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি। অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে আমরা সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি।”
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন ভার্চুয়ালি সিকিমে একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং উদ্বোধন করবেন, যার মধ্যে রয়েছে নামচি জেলায় ৭৫০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি নতুন জেলা হাসপাতাল, গিয়ালশিং জেলার পেলিং-এর সাঙ্গাচোলিং-এ যাত্রীবাহী রোপওয়ে এবং গ্যাংটক জেলার সাঙ্গাখোলায় অটল অমৃত উদ্যানে ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ীর মূর্তি।