লোকসভা ভোটের আগে আদিবাসী ও জনজাতির মানুষদের কথা শুনতে বৈঠকে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘণ্টা দেড়েক বৈঠকে তাঁদের অভাব অভিযোগ শুনে এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা তাদের কাছে আরো ভালোভাবে পৌঁছে দিতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। বিকেলে নবান্ন সভাঘরে ওই বৈঠকে সাঁওতাল, ভূমি, মুন্ডা, লোধা, একাধিক কুড়মি সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব ভগবতী প্রসাদ গোপালিকা এবং রাজ্যের দুই মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ও জ্যোৎস্না মান্ডি। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এমনকী , নির্দিষ্ট ভাবে বেশ কিছু আধিকারিককে কাজ ঠিক মতন না করার জন্যতাঁদের আগামী দিনে বদলি করে দেওয়ার বার্তাও দিয়েছেন বলে সূত্রের দাবি।
সূত্রের দাবি অনুযায়ী , এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন রাজ্য সরকারের নানা আর্থসামাজিক প্রকল্পের সুবিধা জঙ্গলমহলের একদম তৃণমূল স্তর অবধি পৌঁছাছে না। বেশ কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। আবার কিছু কাজ শুরু হয়ে তা মাঝপথে থমকে দাঁড়িয়ে আছে। আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধিদের দাবি , বেশ কিছু সরকারি আধিকারিকের জন্যই এই অবস্থা। সেই কথা শুনেই নিজের ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান , ‘একটা অফিসারের কাজের জন্য কেন বার বার সরকারের মুখ পুড়বে। কিছু অফিসার আছে যারা কাজ করে না সঠিক সময়ে। আমি কিন্তু অফিসারদের মূল্যায়ন করব। ২ বছর বাদে বদলি হয়ে যাবে , এই ভাবে অফিসাররা কাজ করলে হবে না। আমি কেন কথা শুনব অফিসারদের জন্য।’ তবে মুখ্যমন্ত্রী এই কথা আদিবাসী নেতাদের বলেননি। সূত্রের দাবি , অনুযায়ী তিনি তা বলেছেন বৈঠকে উপস্থিত থাকা রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অফিসারদের কাজের রিপোর্ট তাঁর চাই।
আদিবাসী সংগঠনের বৈঠক চলাকালীন রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চোপড়ায় নিহত শিশুদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৈঠকে কুড়মি সমাজের তরফে তাঁদের জনজাতি তকমা দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের গড়িমসির বিষয়টিও তুলে ধরা হয় বলে খবর। ওই সংগঠনের নেতা রাজেশ মাহাতো জানান, একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রী জানান , একাধিক বার কেন্দ্রের চাহিদা মত জাতিগত সমীক্ষা রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠিয়েছে। কিন্তু পাল্টা এব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে মতামত ও ব্যাখ্যা চেয়ে বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বৈঠকে তাঁরা এবিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
জনজাতি উন্নয়নে রাজ্য সরকারের গড়া উন্নয়ন পর্ষদ গুলির বরাদ্দ অর্থ দ্রুত ছড়ার জন্যও নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী । বাউরি , বাগদি , আদিবাসী উন্নয়ন বোর্ড-এর জন্য বরাদ্দ অর্থ দ্রুত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে , এদিনের বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বাগদি ও বাউড়িদের দুটি উন্নয়ন পর্ষদের জন্য ৫ কোটি টাকা করে এবং আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা জানান।
এদিনের বৈঠকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়ে রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তর। রাজ্যের দপ্তরের খামতির পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদেরও এদিন নিশানা বানান। তিনি বলেন,’শিক্ষক নিয়োগই তো করতে দিচ্ছে না। এখানে বিজেপির কয়েকজন বসে আছেন। তারা পিল করছেন আর অ্যান্টাসিড খাচ্ছেন। যখন তোমার হাতে কিছুই নেই , তখন প্যারা টিচারদের নিয়ে কাজ চালাতে হবে।স্কুল শিক্ষা দপ্তরেরও খামতি আছে।’