উত্তরবঙ্গ থেকে বিএলআরও-দের কড়া বার্তা মমতার

আর কয়েক মাস পরই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন নেতা-মন্ত্রীরা। ঠিক যেমন মঙ্গলবার শিলিগুড়ি থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন বাংলাই ইন্ডিয়াকে নেতৃত্ব দেবে। ১৯ ডিসেম্বর দিল্লিতে ইন্ডিয়া জোটের চতুর্থ বৈঠক। তার আগে উত্তরবঙ্গের সভা থেকে ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য রাখলেন মমতা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামিকাল দেশ যা ভাবে বাংলা তা আজ ভাবে। তাই আমাদের বাংলাই ভারতকে নেতৃত্ব দেবে। আমাদের বাংলাই সব দেশকে নেতৃত্ব দেবে। আর সকলকে আমরা মর্যাদা দেব। সকলের জন্য কাজ করব।’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ সফরের শেষ দিনে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী এই অনুষ্ঠান থেকে সরকারি আধিকারিকদের সতর্ক করেন। তাঁর নিশানায় ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকরা। বিএলআরও-দের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি বার্তা, ‘কোনও কোনও বিএলআরও দুষ্টু লোকদের সঙ্গে মিশে জমির পাট্টা নিয়ে দুর্নীতি করছে। আমি মুখ্যসচিবকে বলছি, এঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে। যে কোনও দুর্নীতিতে কোনও সরকারি অফিসার যুক্ত থাকলে ছাড়া হবে না। কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে।’

এর আগেও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের কাজকর্মে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বহুদিন ধরে জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে গ্রাহকদের হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। তা কানে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীরও। আর তার পরই তিনি নিজে এই দপ্তরের কাজের দিকে বাড়তি নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই মুহূর্তে রাজ্যজুড়ে জমিহারাদের জমির পাট্টা বিলির কাজ চলছে। সরকারি উদ্যোগে এই কাজে কোনওরকম গরমিল পেলে অভিযোগের তির উঠছে বিএলআরও-দের দিকেই। আর তা নিয়েই শিলিগুড়ির সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘কয়েকজন বিএলআরও অবৈধ কাজে যুক্ত হচ্ছে। জমির পাট্টা বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাচ্ছি। মুখ্যসচিবকে বলছি, অভিযোগ খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, ‘কোনও রাজনৈতিক নেতার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হলে, তা  ফলাও করে সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয়। কিন্তু কোনও সরকারি আধিকারিক ঘুষ নিলে, তা চাপা পড়ে যায়। আমি বলছি, আমাদের রাজ্যে কোনও সরকারি আধিকারিক ঘুষ নিলে কিন্তু ছাড় পাবেন না।  তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে সরকার।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, মমতার এই বার্তা কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করেই। পাঁচ রাজ্যে ভাল ফল হয়নি তাদের। ফলে ইন্ডিয়া জোটের ভিতরে আসন দরাদরি বা রফা যাই হোক তাতে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে কংগ্রেস শিবির। ফলত, ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার এই সুযোগকে কি হাতছাড়া করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো? প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রেও এগিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন তিনি। শুধু তাই নয়, তৃণমূল যাতে গুরুত্ব পায় সেই প্রয়াসও জারি থাকবে।

বস্তুত, এই পরিস্থিতিতে জোটের যা অবস্থা কংগ্রেসের পর বড় দল বলতে তৃণমূল। তাই বাংলাকে অবশ্যই ইস্যু করতে চাইবে ঘাসফুল শিবির তেমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। গত বিধানসভা ভোটের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, তৃণমূলের স্লোগান ছিল, ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। ফলত, অনুমান করা যেতেই পারে তৃণমূল সুপ্রিমো হয়ত রাহুল গান্ধির সঙ্গে কথা বলবেন কংগ্রেস তৃণমূল যাতে জোট করে নির্বাচন লড়ে। তাহলে এ রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে অধীক আসন ‘ইন্ডিয়া’ পেতে পারবে। কারণ, সদ্য পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, রাহুল গান্ধি তাঁকে ফোন করেছিলেন। তাই জোটে নিজেদের গুরুত্ব বোঝাতে তৃণমূল যে সর্ব শক্তি দিয়ে নামবে এ কথা বলাই বাহুল্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + four =