শাপমুক্তি হল না কেরালার, লক্ষ্মীকান্তর ‘হাত’ ধরে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ

মারগাও: টাইব্রেকার আসলে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। ওই পাঁচটা কিক অনেকের জীবন পাল্টে দেয়। বসিয়ে দেয় নায়কের আসনে। টাইব্রেকার অনেক কিপারের জীবন শেষ করে দেয়। চিরকালের জন্য। পাঁচটা কিক কেউ কেউ হয়তো অন্য ভাবে নেন। অতীতের যন্ত্রণা ভোলার জন্য। লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণির মতো। ২০১৫ সালে চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে গোয়ার মাঠেই ঘরের ছেলে যন্ত্রণায় ডুবে গিয়েছিলেন। সে দিন আর প্রতিপক্ষকে থামাতে পারেননি। কিংবা বলা উচিত, তাঁরই ভুলে ডুবেছিল গোয়া এফসি। ছ’বছর পর লক্ষ্মীকান্ত ফিরলেন। প্রবল ভাবে। গোয়ান কিপারের হাত ধরেই টাইব্রেকারে ৩-১ জিতে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল হায়দরাবাদ  সাদার্ন ডার্বিতে প্রায় সারা ম্যাচ দাপিয়ে খেলেও শেষ পর্যন্ত দখল নিতে পারল না ট্রফির। নির্ধারিত সময়ে ফলাফল ছিল ১-১। বাকি গল্পে একা নায়ক লক্ষ্মীকান্ত।

৬৮ মিনিটে গোলও করে ফেলেন কেরালার ছেলে রাহুল কেপি। মাঝমাঠে বল পেয়ে আলভারো ভাজকোয়েস ডানপ্রান্তে রাহুলের কাছে পাঠিয়ে দেন। তাঁর নেওয়া শট থেকে গোল এল কিছুটা হায়দরাবাদ কিপার লক্ষ্মীকান্ত কাট্টমণির ভুলে। রাহুলের শট ভালো করে গ্রিপই করতে পারেননি গোয়ান গোলকিপার। সেই ভুল টাইব্রেকারে মিটিয়ে নিলেন লক্ষ্মীকান্ত। দ্বিতীয়ার্ধেও গোল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিল দু’ দল। হায়দরাবাদের বিপজ্জনক স্ট্রাইকার ওগবেচে একাধিকবার নিজেকে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। খেলার ৬৮ মিনিটে রাহুল কেপি এগিয়ে দেন কেরালাকে। তাঁর ডান পায়ের শট বাঁচাতে পারেননি কাট্টিমানির মতো অভিজ্ঞ গোলকিপার।বলটা শেষ মুহূর্তে এতটাই ডিপ করে যে কাট্টিমণি শরীর ছুঁড়ে দিয়েও পারেননি সেই বল থামাতে। কিন্তু টাইব্রেকারে তাঁর জন্য যে অন্য চিত্রনাট্য লেখা ছিল।

হায়দরাবাদ গোল করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ফ্রি কিক থেকে ওগবেচের নেওয়া বিপজ্জনক শট কোনওক্রমে বাঁচান গিল। ঠিক যখন মনে হচ্ছে কেরালার জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা, ঠিক তখনই ভলি মেরে হায়দরাবাদকে সমতায় ফেরান সাহিল তাভোরা। খেলার বয়স তখন ৮৮ মিনিট।নির্ধারিত সময়ে কোনও দল আর গোল করতে না পারায় ম্যাচ গড়ায় এক্সট্রা টাইমে। অতিরিক্ত সময়ে লেসকোভিচের হেড হায়দরাবাদের পোস্ট কাঁপিয়ে ফিরে আসে। তার আগে পরিবর্ত হিসেবে চেঞ্চোকে মাঠে পাঠান কেরালার কোচ। শুরুতেই চমকে দিয়েছিলেন ভুটানের এই স্ট্রাইকার। আই লিগে মিনার্ভা পাঞ্জাবের হয়ে কাঁপিয়েছিলেন চেঞ্চো। সেই চেঞ্চো এদিনও গোল পেতেই পারতেন নামার সঙ্গে সঙ্গেই।

০-১ পিছিয়ে থাকা হায়দরাবাদ আবার খেলায় ফিরল ম্যাচ শেষ হওয়ার ২ মিনিট আগে। ৮৮ মিনিটে হায়দরাবাদের হোলিচরণ নার্জারি সেন্টার তোলেন কেরালার বক্সে। কিন্তু প্রতিপক্ষের এক ফুটবলার বল ক্লিয়ার করে দেন। কিন্তু বল পেয়েই বড় বক্সের ঠিক মাথা থেকে জোরালো ভলি গোল তুলে নেন সাহিল টোভারার। এ বারের আইএসএলের অন্যতম সেরা গোল। সবচেয়ে বড় কথা হল, যে সময় টিম হারছে, খেলার আর মাত্র ২ মিনিট বাকি, ঠিকই তখন জ্বলে উঠলেন সাহিল। ৯০ মিনিটে অবশ্য খেলা শেষ করে ফেলতে পারত কেরালা। ভাজকোয়েস যদি নিজেই গোল করে ফেলতে পারতেন। যদি বাঁ দিক থেকে ভেসে বলটা তিনি ঠিকঠাক হেড করতে পারতেন, তা হলে ম্যাচ ইনজুরি টাইমেই শেষ হয়ে যেতে পারত। ভাসকোয়েস অবশ্য ফাইনাল ম্যাচে সে ভাবে ছাপ রাখতে পারেননি। চেষ্টার ত্রুটি ছিল না তাঁর। কিন্তু যে ভাবে তিনি সারা আইএসএল জুড়ে প্রতিপক্ষকে, ফাইনালে সেই ঝাঁঝ দেখাতে পারেননি।

১২০ মিনিট পর্যন্ত ফলাফল থাকল ১-১-ই। দুটো টিমই চাইছিল ফাইনালের হিসেব টাইব্রেকারে করে নিতে। কেরালা কি আর জানত, লক্ষ্মকান্ত কাট্টিমণির হাতেই থমকে যাবে তাদের স্বপ্ন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − five =