নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: ‘চড়াই বাঁচান। ভালো বাসুন চড়াইকে। বাড়ির চালে, জানালায়, আনাচে কানাচে নাচ দেখিয়ে চড়াই আমাদের ভালোবাসা চায়, ওদের ভালবাসা দিন, হারিয়ে যেতে দেবেন না।’ এই আবেদন জানিয়ে বিশ্ব চড়াই দিবসে শিল্পীদের গান, নাটক ও তুলিতে সরব হওয়ার আবেদন জানালেন পরিবেশবাদী সংস্থা মাই ডিয়ার ট্রিজ অ্যান্ড ওয়াইল্ডসের সদস্যরা।
গত ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছর ২০ মার্চ ‘ওয়ার্ল্ড স্প্যারো ডে’ বা বিশ্ব চড়ুই দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ দিনটি গত ১৪ বছর ধরে নিঃশধে পালিত হয়ে আসার ঘটনাকে বেদনাদায়ক বলে উল্লেখ করেছেন এই পরিবেশবাদী সংস্থার সদস্যরা। বুধবার বাঁকুড়ার মানকানালি ও বেলিয়াতোড়ে চড়াই পাখি নিয়ে এক কর্মশালার আয়োজন করে সংস্থাটি। এই সংস্থার পক্ষে সংগীতা ধর বিশ্বাস ও ঝর্না গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেন, বাঁকুড়া জেলা সহ সারা রাজ্য থেকে ক্রমেই চড়াই হারিয়ে যাচ্ছে। চড়াই যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য শিল্পীদেরû গান, গীতিআলেখ্য, নাটক ও তুলিতে সরব হওয়া দরকার। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সংßৃñতি মন্ত্রকের আর্থিক সহায়তায় এনভায়রনমেন্টাল মিউজিক ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করতে চলেছে তারা। এই উৎসবে বৃষ্টির জল ধরে রাখা, চড়াই বাঁচানোর মতো পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তাঁদের দাবি, কয়েক বছর আগেও বিহার ও পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান,বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলিতে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়াই দেখা যেত। এজন্য এসব এলাকায় পোকামাকড়ের অত্যাচার ছিল কম। এতে ফসল ভালো হত। রোগজ্বালা কম হত। সে কারণে গত ২০১৩ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার চড়াইকে ‘রাজ্য-পাখি’ ঘোষণা করে চড়াই সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, গ্রামাঞ্চলে এখনও চড়াই নির্বিচারে হত্যা ও পাচার চলছে বলে অভিযোগ। চড়াই ফসলের ক্ষতি করে এই ভুল ধারণা রয়েছে বলে দাবি। এই ভুল ধারণায় ৫০-এর দশকে মাও সে তুংয়ের নির্দেশে চিন চড়ুই নিধনে মেতে উঠেছিল বলে দাবি। তার ফল কিন্তু চিনকে মেটাতে হয়েছিল কড়ায় গন্ডায়।
আরও দাবি, চড়াইয়ের অভাবে চার-পাঁচ বছরের মাথায় চাষের জমি, বাগান সর্বত্র পোকামাকড়ে ভরে গিয়েছিল। খাদ্যসঙ্কটের কবলে পড়ে চীন। দুর্ভিক্ষে মারা যায় প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ। এই ঘটনার পর চিনে শুরু হয় চড়াই রক্ষার আন্দোলন। বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, চড়াই হারিয়ে যেতে চলার জন্য দায়ী মানুষ। মানুষের বদলে যাওয়া জীবন যাত্রা। অতীতে ফ্ল্যাটবাড়ি কালচার ছিল না। পুরনো বাড়িগুলিতে আলোবাতাস চলাচলের জন্য থাকত নানা ধরনের ছোট-বড় ফাঁকফোকর, ঘুলঘুলি, কড়িবরগা, চিলেকোঠার ঘর। এগুলি চড়াই পাখির বাসা বানানোর জায়গা ছিল। সেখানে এরা ডিম পাড়ত, ছানা বড় হত। এখনকার ফ্ল্যাট বাড়িতে এসব থাকে না। তাই চড়াইদের থাকার জায়গার অভাব হয়ে পড়েছে।
শুধু তাই নয়, এখন খাবারেও পড়ছে টান। চড়াইদের প্রধান খাবার পোকামাকড়। বেড়ে ওঠার সময় প্রোটিনের প্রয়োজন। চড়াই দম্পতি সারাদিন খুঁজে খুঁজে ছানাদের খাওয়ানোর জন্য পোকা ধরে নিয়ে আসে। কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে পোকা তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া, বর্তমানে যে সব গাছ লাগানো হয় তাতে পোকা ধরে কম। ফলে পর্যাপ্ত খাবারও পায় না তারা। তাই চড়াই বাঁচাতে সরব হতে হবে সকলকে। এজন্য চড়াই রক্ষার গান, গীতিআলেখ্য ও নাটক রচনা ও তৈরির তালিম দেওয়া হয় এই কর্মশালায়।
মাকুড়গ্রাম এলাকার শিল্পী প্রভাতী জানা জানান, বিশ্ব চড়াই দিবসে তঁরা সায়েন্সকে ভিত্তি করে গান ও নাটক তৈরি শিখেছেন। এটা কেন্দ্রীয় সংßৃñতি মন্ত্রকের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। বিশিষ্ট পরিবেশ প্রেমী গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় জানান, রজনীকান্ত সেন তাঁর স্বাধীনতা সুখ কবিতায় চড়াই সম্পর্কে সতর্কবাণী দিয়েছিলেন।