ফুলবাড়িতে প্রচারে গিয়ে বিজেপি বিধায়ককে নিশানা মমতার, শোনা গেল আক্ষেপের সুরও

১৯ এপ্রিল, প্রথম দফায় ভোট রাজ্যের তিন কেন্দ্রে , কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে। তার আগে জেলায় জেলায় ঘুরে দলীয় প্রার্থীদের হয়ে নির্বাচনী প্রচার করে চলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের হয়ে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে জনসভা করেন তিনি। আর সেই মঞ্চ থেকেই ‘দুঃখের কথা’ শোনালেন তৃণমূল সুপ্রিমো। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলে একচেটিয়া জিতেছিল বিজেপি। সেই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই মমতা জনগণের উদ্দেশে প্রশ্ন করলেন, ‘তৃণমূল কী দোষ করেছিল যে পাহাড়, জঙ্গলমহল কোথাও আসন পেল না?’ এর পর তৃণমূলের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে মমতার আর্জি, ‘ভোটটা দয়া করে আর বিজেপিকে দেবেন না। কাজটা করে তৃণমূলই।’

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল প্রার্থী গৌতম দেবের হয়ে প্রচার করতে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঠভর্তি দর্শক ছিল। কিন্তু ভোটবাক্সে তার প্রভাব পড়েনি। শনিবার জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী নির্মলচন্দ্র রায়ের হয়ে প্রচার করতে এসে আক্ষেপই ঝরে পড়ল মমতার গলায়। পাশাপাশি নাম না করে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রের বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়কে বিঁধলেন তিনি। ২০২১ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না-হয়, সেই আবেদনও রাখলেন ভোটারদের কাছে। মমতার এই মন্তব্যের পর পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক শিখাও।

শিলিগুড়ির জাবরাভিটার জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বলেন, ‘২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী গৌতম দেবের প্রচারে এসে দেখেছিলাম মাঠ উপচানো ভিড়। কিন্তু পরে দেখলাম গৌতম হেরে গেল। আর যাকে আপনারা জেতালেন তার সম্বন্ধে বিজেপির মত কুরুচিকর মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু মনে রাখবেন, তাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে গ্রাম পঞ্চায়েত বা সমিতির মেম্বার আমিই বানিয়েছি। আর তার কত ফুটানি। ডাবগ্রামের কথা তার মনে থাকে না! কী করেছে জিজ্ঞেস করুন তাকে।’

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে ১৮টি আসন জিতেছিল বিজেপি। উত্তরবঙ্গের আটটি লোকসভা আসনের মধ্যে সাতটিই বিজেপির দখলে যায়। শুধুমাত্র মালদহ দক্ষিণ কেন্দ্রে জয়ী হয় কংগ্রেস। মমতার দাবি, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কোনও বৈরিতা করেনি তাঁর সরকার। সমান উন্নয়ন করেছে। কিন্তু বিজেপি এতগুলো লোকসভায় জিতেও কোনও কাজ করেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। মমতার কথায়, ‘উত্তরবঙ্গের সিংহভাগ আসন তো বিজেপির। কিন্তু বিজেপি উত্তরবঙ্গের জন্য কোনও কাজই করেনি। আমরা বেঙ্গল সাফারি পার্ক করেছি। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নাইট ল্যান্ডিংয়ের জন্য জমি দিয়েছি। বিনা পয়সায় রেশন দিচ্ছি। আর বিজেপি আটকে রেখেছে সাধারণ মানুষের ১০০ দিনের কাজের টাকা থেকে আবাস যোজনার টাকা।’ তার পরেই নাম-না করে ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক শিখাকে নির্বাচনী সভামঞ্চ থেকেই একহাত নেন তৃণমূল নেত্রী মমতা।

২০২১ সালে রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী গৌতমকে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি আসন থেকে তৃণমূল প্রার্থী করার পরই গোষ্ঠীকোন্দল দেখা যায়। তখন তৃণমূল থেকে বেরিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন শিখা। গৌতমকে পরাজিত করে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে পদ্ম ফোটান শিখা। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তা নিয়ে শিখার প্রতিক্রিয়া, ‘কেউ তো কাউকে তুলে নিয়ে আসেই। ওঁকেও সুব্রত মুখোপাধ্যায় এক দিন তুলে নিয়ে এসেছিলেন। সেটাও উনি মনে রাখুন। আসলে প্রত্যেককেই কেউ না কেউ তুলে নিয়ে আসেন।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − 3 =