ডায়বেটিস রোগে রক্তে চিনি বা শর্করার মাত্রা অনেকদিন ধরে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি মাত্রায় থাকে। সাধারণতঃ শর্করার বিপাকের জন্য দায়ী হরমোন হল ইনসুলিন। আর এই ইনসুলিন হরমোনের কম ক্ষরণের কারণে, বা ইনসুলিন উৎপাদনকারী অগ্ন্যাশয়( প্যাংক্রিয়াস) এর বিটা কোষ বিনষ্ট হলে অথবা ইনসুলিন হরমোনের কার্যক্ষমতা বাধাপ্রাপ্ত হলে এই রোগ দেখা দেয়। বর্তমান যুগে টাইপ টু ডায়বেটিস বা মধুমেহ প্রায় মহামারির আকারে দেখা দিতে শুরু করেছে, যা প্রধানত হয় ইনসুলিন হরমোনের কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার জন্য। এবং এর পিছনে মূল কুশীলব হল- স্থূলত্ব বা ওবেসিটি, আধুনিক যন্ত্রনির্ভর জীবনযাত্রা, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস , মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা ইত্যাদি।
আর মহিলাদের ক্ষেত্রে এই কারণগুলিই ডেকে আনে আরেক রোগকে যার নাম পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিণ্ড্রোম (PCOS)। এই রোগে মহিলাদের ঋতুস্রাব হয় অনিয়মিত,দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে অবাঞ্ছিত রোমের আধিক্য – কিছু ক্ষেত্রে পুরুষালী দেহসৌষ্ঠব। আর আল্ট্রাসাউণ্ডে ডিম্বাশয়ের ভিতর পাওয়া যায় ছোট ছোট অনেক সিস্ট বা জলকোষ।
তাই বলে ডিম্বাশয়ের ভেতরে সিস্ট পাওয়া মানেই পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিণ্ড্রোম হয়েছে এই ধারণাটিও ভুল। অন্য অনেক কারণে, হরমোনঘটিত জটিলতার কারণেও আল্ট্রাসাউণ্ডে এইরকম বিবরণ পাওয়া যেতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিণ্ড্রোমের ক্ষেত্রে ডায়বেটিস বা মধুমেহ রোগটি আসার ঝুঁকি অনেকাংশেই বেড়ে যায়, যেহেতু দুটি রোগেরই আসল কারণ লুকিয়ে আছে আধুনিক জীবনযাপনের গভীরে। আর সেই কারণে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এই দুটি রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেই অন্যতম প্রধান ভূমিকা গ্ৰহণ করে।
সচেতনতা খুব প্রয়োজনীয় একটি বিষয়, বিশেষ করে এই সকল জীবনশৈলী সম্পর্কিত রোগের ক্ষেত্রে। নিয়মিত সুষম খাদ্যাভ্যাস, সঠিক ব্যায়াম, মানসিক সুস্বাস্থ্য এই রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।আর সেই সাথে দরকার সচেতন মনোবৃত্তি, যাতে সহজেই নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা চিকিৎসকের পরামর্শ প্রাথমিক অবস্থাতেই নেওয়া যায়। আর এই বিষয়ে আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু চিকিৎসক ছাড়া আর কেই বা হতে পারেন?
◆পিয়াস গড়গড়ি, MBBS, MD (General Medicine), DM(Endocrinology)◆