শিশুরা অসুস্থ হলে স্কুলে পাঠাবেন না, পরামর্শ স্বাস্থ্য দপ্তরের

অ্যাডিনো ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে কপালে ভাঁজ প্রশাসনের। এরপরই কলকাতার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা। এই বৈঠকে মূলত হাসপাতালগুলিতে অ্যাডিনো ভাইরাসের আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা ও তাদের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। শিশু চিকিৎসকেরা কোভিডের মতোই অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রামক জানিয়ে মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলা সহ বিশেষ নির্দেশিকা জারি করার প্রস্তাব দেন স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। এঁদের এই প্রস্তাব মেনে অবশেষে সরকারি নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। কারণ, অ্যাডিনো ভাইরাসে মূলত শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে স্কুল থেকে শিশুদের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ফলে স্কুলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সতর্কতা অবলম্বন জরুরি বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। যদিও শিক্ষা দফতরের তরফে এখনই এবিষয়ে কিছু বলা হয়নি। স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফেও শিক্ষা দপ্তরে এখনই কোনও নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। এপ্রসঙ্গে রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানান, ‘আমরা অভিভাবকের সতর্ক করছি। শিশুরা অসুস্থ হলে স্কুলে পাঠাবেন না। কারণ সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।‘ আক্রান্তের সংখ্যায় রাশ‌ টানতেই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অভিভাবকদের প্রতি এই পরামর্শ দেওয়া হয়। এদিনের এই বিজ্ঞপ্তিতে বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে ৫ পরামর্শের পাশাপাশি চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও অ্যাডিনো ভাইরাস মোকাবিলায় বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বিবৃতি দিয়ে অ্যাডিনো ভাইরাস মোকাবিলায় বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যেও পাঁচটি পরামর্শও দেন। যার মধ্যে রয়েছে, ১) অসুস্থ শিশুকে স্কুলে পাঠাবেন না। ২) ভিড় জায়গা এড়িয়ে চলুন। ৩) বাস-ট্রেন-সহ ভিড়বহুল জায়গায় মাস্কের ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। ৪) অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার নয়। ৫) জ্বর, মাথাব্যথা, সর্দি-কাশির উপসর্গ হলেই শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া জরুরি।

অন্যদিকে, অ্যডিনো ভাইরাস মোকাবিলায় রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর বিবৃতিতে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যেও তিন নির্দেশ‌ জারি করা হয়েছে। সেগুলি হল, ১) পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, অক্সিজেনের জোগানে নজরদারির জন্য সিএম‌ওএইচ, মেডিক্যাল কলেজগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ২) প্রয়োজনে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। ৩) পরিস্থিতির নিরিখে কলকাতার হাসপাতালগুলিতে অসুস্থ শিশুদের রেফার করতে হবে।

শুধু তাই নয়, কোভিডের ধাঁচে ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস বা ইলি এবং শ্বাসকষ্টজনিত অসুখের ডেটা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়াও চালু করা হল। প্রতিদিন হাসপাতালগুলিতে কত নতুন শিশু ভর্তি হচ্ছে, কতজনের মৃত্যু, নতুন-পুরোনো মিলিয়ে কতজন শিশু, চিকিৎসাধীন রয়েছে, পিকু, নিকু, সিসিইউ, এস‌এনসিইউয়ে কতজন রয়েছে, ভেন্টিলেটরে কতজন রয়েছে- সব তথ্য হাসপাতালগুলিকে জানানোর নির্দেশও জারি করা হয় স্বাস্থ্য ভবনের তরফ থেকে। অন্যদিকে, স্কুলে মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলা এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়েছেন বি.সি রায় হাসপাতালের অধ্যক্ষ দিলীপ রায়। সবমিলিয়ে, দক্ষিণবঙ্গে অ্যাডিনো ভাইরাসের প্রকোপ যে উদ্বেগের হয়ে উঠেছে, তা শিশু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা জারির ঘটনাতেই স্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 18 =