কলকাতা: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।ভিজিটর বা পরিদর্শক পদ থেকে সরানোর ভাবনা চলছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে।সেই জায়গায় এবার বসতে পারেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী (Bratya Basu)। এখন ওই পদে আছেন রাজ্যপাল। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাজ্যপাল নন।
গত বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রিসভা ঠিক করেছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ওই পদে বসানো হবে শিক্ষামন্ত্রীকে। এ জন্য বিধানসভায় সংশ্লিষ্ট আইনের পরিবর্তন করা হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটর বা পরিদর্শক পদে উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীকে বসাতে হলেও আইন সংশোধন প্রয়োজন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারাক হল, সেখানে আচার্যের উপরে আছেন ভিজিটর বা পরিদর্শক। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্যই সর্বোচ্চ পদ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্য পদে কে বসবেন তা ঠিক করার ক্ষমতা ২০১২ সালের প্রাইভেট ইউনিভাসির্টি আইনে দেওয়া আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিকে। সেখানে সরকার বা রাজভবন নাক গলায় না। রাজ্যের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই সংস্থার কর্তা আচার্য বলে আসীন। কোনও কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আবার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে ওই পদে বসিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শক পদ আছে বিশ্বভারতীর মতো কয়েকটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে পরিদর্শক হলেন রাষ্ট্রপতি। আচার্য হলেন প্রধানমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করার সিদ্ধান্ত ঘিরে শিক্ষায় দখলদারির রাজনীতি করার অভিযোগ খণ্ডন করতে গিয়ে তৃণমূল শিবির থেকে বারে বারেই বিশ্বভারতীয় দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হচ্ছে। বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হতে পারেন, তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর হতে বাধা কোথায়?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক হিসাবে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় মাস কয়েক আগে সেগুলির উপাচার্যদের রাজভবনে তলব করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠক হয়নি। সরকারিভাবে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনার কথা বলা হলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই পরিদর্শক তথা রাজ্যপালের ওই বৈঠক এড়াতে চেয়েছিলেন। সেই কারণে সম্মিলিতভাবে রাজভবনকে করোনার কথা বলে বৈঠক বাতিলের আর্জি জানানো হয়েছিল।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শক বা ভিজিটরের কী ভূমিকা পালন করার কথা, ক্ষমতাই বা কতটা?
২০১২-র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের সমান মর্যাদা ও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ভিজিটরকে। তবে তিনি উপাচার্য নিয়োগে নাক গলাতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করা, ডিগ্রি প্রদান ইত্যাদি করবেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত নথিপত্র তলব করার ক্ষমতা আছে তাঁর। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আইন মেনে চলছে কিনা দেখা তাঁর কাজ। এ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ।তাঁর কথায়, সরকার চাইছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করতে। তাদের ইচ্ছে ছাড়া কিছু হবে না। অন্য দিকে, সরকারের তরফে যুক্তি দেখানো হয়েছে রাজ্যপাল অনেক ক্ষেত্র বিভিন্ন ফাইলে সই করেননি। ফলে কাজ আটকে আছে।
এই ভাবনাচিন্তার সমালোচনা করেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। তাঁর কথায়, এটা দুঃখজনক।