হানিমুনের নতুন ঠিকানা ছোটা রঙ্গিতের কোলে বিজনবাড়ি

সুস্মিতা মণ্ডল

 

বিয়ে করেছেন? কিন্তু মধুচন্দ্রিমা যাপনে কোথায় যাবেন তা নিয়েই ভাবনা তো!

হাতে মোটা টাকা আর লম্বা ছুটি থাকলে মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, মরিশাস, সুইত্জারল্যান্ড তো আছেই, আর দেশেও আছে কাশ্মীর থেকে আন্দামান হাজারও জায়গা।

কিন্তু যদি আপনি প্রাইভেট কোম্পানির চাকুরিজীবী হন, আর বিয়ের পর হাত বেশ খালি খালি মনে হয়, ছুটি নিয়েও টানাটানি থাকে, সর্বোপরি যদি পাহাড় ও প্রকৃতিপ্রেমী হন, তাহলে বরং আপনাকে এক জায়গার সন্ধান দিতে পারি।

যেখানে কাঠের ঝুলন্ত বারান্দা থেকে দেখা যায় পাহাড়ে ধাক্কা খেতে খেতে বয়ে চলা নদী। পাহাড়ের সারি, আকাশ ছোঁয়া পাইন ও অন্যান্য গাছ। যেখানে ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে। যেখানে নরম রোদ্দুরে পাথরে বসে পানকৌড়ি শ্যেনদৃষ্টিতে অপেক্ষা করে শিকারের। যেখানে ঠান্ডা হাওয়া আলতো পরশ বুলিয়ে দেয় চোখেমুখে। সত্যি কথা বলতে কি, এই জায়গা সেই সমস্ত রোম্যান্টিক কাপলদের জন্য, যাঁরা পাহাড়, নদী, জঙ্গল, নিস্তব্ধতার প্রেমিক।

বিজনবাড়ি। দার্জিলিং জেলার দার্জিলিং-পুলবাজার ব্লকের ছোট্ট গ্রাম।পাহাড়ি এই গ্রাম দিয়ে বয়ে গেছে ছোটা রঙ্গিত নদী।সবুজে ঘেরা চারপাশ। আর নদী ঘিরে বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে ভীষণ সুন্দর হোম স্টে।প্রকৃতিপ্রেমী দম্পতিদের কাছে এই জায়গা মনের মতো মধুচন্দ্রিমার স্থান।আর যদি আপনার বিয়ে পুরনো-ও হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে বলব এই জায়গা নতুন করে রোজের জীবনের খুঁটিনাটিতে থিতিয়ে পড়া প্রেমকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আদর্শ।

এখানে এক্কেবারে নদীর ধারে থাকার জন্য রয়েছে ছোট্ট ছোট্ট কটেজ। দিনরাত প্রকৃতিকে নিবিড় ভাবে উপভোগ করার পাশপাশি পাবেন হোম স্টে-র ঘরোয়া খাবার।নরম তুলতুলে গরম মোমো।

সাইট সিইং

জামুনি

২-৩ দিন বিজনবাড়ির আনাচ-কানাচ ঘুরেই দিব্যি কেটে যাবে। তবে যদি চান আশপাশে ঘুর দেখতে পারেন ১০ কিলোমিটার দূরের জামুনি। বিশাল শিবের মূর্তি রয়েছে এখানে। নদীর কোলে এই জায়গাটিও ভারি মনোরম। রয়েছে পার্কও।

মেগিটার

বিজনবাড়ি থেকে মোটামুটি ১৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মেগিটার। আকাশ পরিষ্কার থাকলে মেগিটার যাওয়ার পথে বাঁকে বাঁকে দেখা মিলবে শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার। মেগিটারও একটা অফবিট জায়গা। প্রকৃতি উজাড় করে দিয়েছে এখানে নিজেকে। মেগিটারে রয়েছে একটি পার্ক।পাহাড়ি ধাপে ধাপে উঠে গিয়েছে রাস্তা। মাথায় চড়তে পারলে চারপাশের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যাবে। মেগিটারের পার্কটা স্থানীয়দের কাছে খুব জনপ্রিয়। স্থানীয় কম বয়েসি ছেলে-মেয়েরা বাইকে করে এখানে চলে আসেন কিছুটা সময় প্রকৃতির কোলে একান্তে কাটাক।খাবার বানিয়ে নিয়ে এসে অনেকে এখানে বসে পিকনিকও করেন।

থাকার জায়গা

রিভার উডস ইন

বিজনবাড়িতে পুলবাজার পেট্রোল পাম্পের অদূরেই নদীর কোলে একেবারে নতুন একটি হোম স্টে রয়েছে।যার নাম রিভার উডস ইন।রাস্তা থেকে লম্বা সিঁড়ি নেমে গিয়েছে ধাপে ধাপে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামাটা একটু কষ্টকর বয়স্কদের কাছে হলেও, এই জায়গার ভিউ অসাধারণ। ঝকঝকে ঘরে আধুনিক ইন্টিরিয়র ডেকরেশন। বাইরের সজ্জাও চোখে পড়ার মতো। কাঠের ঝুলন্ত বারান্দা থেকে দেখা যায় ছোটা রঙ্গিতের অবিরাম বয়ে যাওয়া। নদীর ধার পর্যন্ত ধাপে ধাপে নেমেছে সিঁড়ি। সেখানে প্রকৃতির মাঝে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে বসে থাকতে পারেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কোথাও উড়ছে রঙিন পতাকা। কোথাও আবার মাছ ধরতে ব্যস্ত পাখিরা।ছোট ছোট পাথরে ধাক্কা খেয়ে ফেনিল জল বয়ে চলেছে অবিরাম।এখানে শব্দ আছে, তবে শুধু প্রকৃতির।কলতান আছে, পাখিদের।

বিজনবাড়ি, ব্যাম্বু রিসর্ট

বিজনবাড়ি ব্যাম্বু রিসর্টও একবারে নদীর গায়ে। খুবই জনপ্রিয়।

খরচ- এখানে মাথা পিছু থাকা ও খাওয়ার খরচ ধার্য হয়। বিভিন্ন হোম স্টের বিভিন্ন রকম রেট। তবে ১৩০০- ২০০০ টাকা চার বেলার খাওয়া ও থাকা সহ প্রতি রাতের জনপ্রতি খরচ পড়বে।

কীভাবে আসবেন বিজনবাড়ি

এনজেপি থেকে বিজনবাড়ির দূরত্ব মোটামুটি ১০৫ কিমি। পাহাড়ি পথে আসতে ৫ ঘণ্টা সময় লেগেই যায়। যানজট থাকলে সময় লাগে আরও বেশি।

গাড়িভাড়া পড়ে-৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, সিজন অনুযায়ী ও গাড়ি অনুযায়ী।

কেউ চাইলে দার্জিলিং শেয়ার গাড়িতে এসে সেখানে চক বাজার থেকে বিজনবাড়ি যাওয়ার শেয়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন।

এছাড়া শিলিগুড়িতে মহানন্দা ব্রিজের কাছে সিনেমাহলের সামনে থেকে শেয়ার গাড়ি ছাড়ে বিজনবাড়ির।

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × 3 =