‘ওয়ার্ক ফ্রম হিল’-এর নতুন ঠিকানা কালেজ ভ্যালি

সুস্মিতা মণ্ডল

ভাবুন তো একবার, যে দিকে তাকানো যায় শুধু সবুজ। দূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সবুজ পাহাড়। সামনেই চা-বাগান। শেড ট্রিতে উড়ে বেড়াচ্ছে নানারকম পাখি। কলতানে ভরে যাচ্ছে চারপাশ। সবুজ উপত্যকার ঢাল বেয়ে নামছে মেঘের স্তূপ। সেই দৃশ্য আপনি দেখছেন বারান্দায় বসে।

 

ভাবুন একবার, যদি আপনার ঝাঁ চকচকে, এসির হাওয়ায় ঠান্ডা কর্পোরেট অফিসের ছবিটা এক ঝলকে বদলে এমন হত? কোনটা ভালো লাগত আপনার, গদি আঁটা কর্পোরেট অফিসের চেয়ারে বসে কাজ, নাকি কল্পনার চোখে যে বারান্দা আপনি দেখেছেন, সেই বারান্দাতে বসেই আপনি কাজ করতে পারতেন?

এতদিন যা  স্বপ্ন ছিল, সেটাই এখন বাস্তব হয়েছে করোনার দৌলতে। করোনা অতিমারী কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু। চলে গিয়েছে বহু প্রাণ। ওলটপালট হয়ে গিয়েছে জীবন। কিন্তু সব খারাপের একটা ভালো দিক থাকে।করোনার জেরে ভারতে শুরু হয়েছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। অর্থাত্ ঘরে বসে কাজ। তবে সেই ঘরটা আপনার বাড়ির চার দেওয়াল না হয়ে যদি পাহাড়ের কোনও ছোট্ট গ্রামের ছোট্ট কটেজ হয়, তবে কেমন লাগবে? যেখানে পাহাড় আছে, ঝরনা আছে, মেঘ আছে, রোদ আছে, স্বপ্ন আছে, অকৃত্রিম প্রকৃতি আছে।

এমনই সুযোগ রয়েছে এ রাজ্যে। হিমালয়ের রানি বলে যাকে জানি, সেই দার্জিলিং-এর অদূরেই রয়েছে এমন এক জায়গা, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে স্বর্গরাজ্য আবার একই সঙ্গে ওয়ার্ক ফ্রম হিল বা ওয়ার্ক ফ্রম মাউন্টেন-এর নয়া ঠিকানা। এ জায়গার নাম কালেজ ভ্যালি (Kalej Valley)। এই কালেজ ভ্যালিতেই আছে রেনবো ভ্যালি হোম স্টে বা রিজর্ট (Rainbow Valley Resort)। সেখানে আছে এমন সুন্দর কটেজ, আর তার চেয়েও সুন্দর বারান্দা। ঠিক যেখানে বসে আপনি ল্যাপটপ খুলে পাখির ডাক শুনতে শুনতে, ঠান্ডা হাওয়ায় বসে কাজ করতে পারেন অফিসের। সেই অফিসের দেওয়াল অনন্ত, রূপও তার অপরূপ।

অফিসের চাপে জীবন ক্লান্তিকর হয়ে গেলে, বেরিয়ে পড়তেই পারেন এমন ঠিকানায়। দার্জিলিং থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে কালেজ ভ্যালি। রংবুল থেকে রাস্তা নেমে গেছে নীচে। সেখানে নেই শহুরে কোলাহল, এমনকী নামী-দামি হোটেল। দোকানপাটেরও বালাই নেই। আছে প্রকৃতির নির্মলতা। বিস্তীর্ণ চা বাগান। আছে পাহাড়ি মানুষের আতিথেয়তা। অচেনা অতিথিকে সহজে আপন করে নেওয়ার আন্তরিকতা।

রকমারি খাবার নেই। তবে এখানে ঘরোয়া খাবারে  মিশে থাকে আন্তরিকতা। শহুরে জীবন থেকে দূরে এই গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ এতটা ভালো, না গেলে বোঝার উপায় নেই। জিও-র সিম থাকলে সেখানে বসে নিশ্চিন্তে কটা দিন অফিসের কাজ করতে পারেন। কাজ হয়ে গেলে কম্বলের ওমে অবসর সময় কাটতে পারে। কিম্বা সকালে ঘুম থেকে উঠে ২ কিলোমিটার ট্রেক করে দেখে নিতে পারেন ইন্দ্রাণী ফলস। যাকে স্থানীয়রা রেনবো ফলস বলে। ঝকঝকে রোদ থাকলে সকালের দিকে এই ঝরনায় রামধনু বা রেনবো দেখা যায়। না দেখতে পেলেও ক্ষতি নেই। প্রকৃতির অকৃত্রিম সৌন্দর্য ভুলিয়ে দেবে সব অভাব।

চাইলে পায়ে পায়ে নেমে যেতে পারেন চা-বাগানের গা বেয়ে। চাইলে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করতে পারেন রঙিন সব পাখিদের। সকাল বেলা ধোঁয়া ওঠা ওয়াই ওয়াই কিম্বা আলুর তরকারিতে লুচি ডুবিয়ে মুখে চালান করে বসে যেতে পারেন অফিসের কাজে। প্রয়োজন মতো চা-কফি বললেই পেয়ে যাবেন।

এমন জায়গাকে কি লুকানো রত্ন ভাণ্ডার বলে অত্যুক্তি হয়?

কালেজ ভ্যালি, কীভাবে যাবেন- দার্জিলিং (Darjeeling)থেকে গাড়ি বুক করে যেতে পারেন কালেজ ভ্যালি। চাইলে হোম স্টের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। রেনবো ভ্যালি রিসর্ট বা হোম স্টের শেষ ২ কিলোমিটার রাস্তা কিন্তু বেশ খারাপ। দার্জিলিং থেকে গাড়িতে যেতে মোটামুটি দেড় ঘণ্টা লাগে।

এনজেপি থেকে রংবুল (Rongbull)হয়ে কালেজ ভ্যালি যেতে লাগবে সাড়ে তিন থেকে ৪ ঘণ্টা। শেয়ার গাড়িতে রংবুল এসে, সেখান থেকেও হোম স্টেতে বলে গাড়ি আনিয়ে নিতে পারেন।

খরচ- হোম স্টে বিভিন্ন মানের একাধিক কটেজ আছে। খরচ ১৮০০-৩২০০। ঘর ভাড়া আলাদা। সিজন অনুযায়ী বাড়া-কমা হয়। খাওয়া খরচ মাথাপিছু ৭০০ টাকা। এতে চার বেলার খাবার থাকবে।

ইন্টারনেট সংযোগ- ওয়ার্ক ফ্রম মাউন্টেন বা হিলের জন্য এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জিও-র নেটওয়ার্ক এখানে ভীষণ ভালো। কাজ করতে কোনও অসুবিধে হয় না। হোম স্টের ওয়াইফাই আছে। তবে এ ব্যাপারে আগাম কথা বলে নেওয়া ভালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − four =