সমবায় দপ্তরে বেআইনি নিয়োগ মামলায় নাম জড়ালো মন্ত্রী অরূপ রায় ও দপ্তরের সচিবের

ফের দুর্নীতি মামলায় চাপ বাড়লো শাসক দলের। এবারে রাজ্যের সমবায় দপ্তরে নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হলো মামলা। আর সেই মামলায় আবেদনকারীরা দপ্তরের মন্ত্রীকে অভিযুক্ত করে দায়ের করা হয় হলফনামা।

ইতিমধ্যেই রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় , পরেশ অধিকারী-সহ বীরভূম জেলার সভাপতি  অনুব্রত মণ্ডলের নাম জড়িয়েছে দুর্নীতির মামলায়। এবার নতুন করে নাম জড়ালো মন্ত্রী অরূপ রায়ের। রাজ্যের সমবায় ব্যাংকে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ উঠল তাঁরই বিরুদ্ধে। অভিযোগ সমবায়মন্ত্রীর দপ্তরের সচিব সত্যব্রত সামন্তের বোন সমবায় দপ্তরে চাকরি পেয়েছেন।  আরো অভিযোগ, শূন্য পদের সংখ্যার থেকে দ্বিগুণ লোক নিয়োগ করা হয়েছে বলেই সূত্রের খবর। এছাড়াও অন্যান্য জেলার একাধিক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। এরপরেই হাইকোর্টের মামলায় অরূপ রায়ের নাম উঠল। আর মামলার অতিরিক্ত হলফনামায় জমা পড়ল এমনই তথ্য বলেই আদালত সূত্রে জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি তমলুক – ঘাটাল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকে তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

মন্ত্রী অরূপ রায়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তালিকাটা বেশ লম্বা।  অরূপ রায়ের দপ্তরের সচিব সত্য সামন্তের বোন চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। এমনকী চাকরি পেয়েছেন পূর্ব – মেদিনীপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি প্রয়াত দেবব্রত দাসের ভাইপো। ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র মাইতির ভাইপোকেও   চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে । ব্যাংকের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সিইও ( বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) প্রণয় কুমার চক্রবর্তীর ভাইপোও  চাকরি পেয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে ওই হলফনামাতে। ব্যাংকের সচিব কৌশিক কুলভির ভাইপো চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। ব্যাংকের অন্যতম অধিকর্তা নিমাই অধিকারীর মেয়ে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। ব্যাংকের অন্যতম অধিকর্তা তপন কুমার কুলিয়ার ছেলে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ।

সূত্রের খবর, মোট ৫২ টি শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত ১৩৪ জন নিযুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আর এই নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগের জন্য দু – দফায়  অনুমতি দিয়েছেন মন্ত্রী অরূপ রায় নিজেই বলে দাবি করা হয়েছে আদালতে জমা দেওয়া ওই হলফনামাতে। সূত্রের খবর, এমনটাই অভিযোগ করেছেন মামলাকারী। মামলায় অভিযোগ, কো – অপারেটিভ সার্ভিস কমিশন ছাড়া নিয়োগ করতে পারবে ব্যাংক, এই মর্মে দুবার অনুমোদন দিয়েছিলেন অরূপ রায়। যেখানে কো – অপারেটিভ সার্ভিস কমিশন ছাড়া নিয়োগ করা আইনবিরুদ্ধ।

সমবায় ব্যাংকে মোট ২০৩৫ জন আবেদন করেছিলেন এবং ব্যাংকের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে ফি জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু ফি জমা দেওয়ার এই তালিকায় ১০০ টির বেশি নাম ফাঁকা রয়েছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, ঘনিষ্ঠ  হওয়ার  সুবাদে অনেকে আবেদন না করেও অনেকে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু মেধাতালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও অনেকে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। যদিও সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে মন্ত্রী গত পরশু রাত্রে দপ্তরের সচিব সত্যব্রত সামন্ত ও পিপি সিং-সহ দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হন। বর্তমানে তিনি দিল্লিতেই আছেন। সেখান থেকে হরিদ্বার, ঋষিকেশ হয়ে উত্তরাখণ্ড দর্শন করে  চলতি মাসের ৩১ শে অগস্ট তাঁর হাওড়া ফেরার কথা বলেই জানা যাচ্ছে সূত্র মারফৎ।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০২১ সালে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। এবার  মামলাতেই অতিরিক্ত হলফনামা দাখিল করে নতুন এই অভিযোগ জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 16 =