কলকাতা: হাওড়া স্টেশনের জনবহুল চত্বরে ঘুরে বেড়ালেও বাগুইআটি হত্যাকাণ্ডে মূলচক্রী সত্যেন্দ্র চৌধুরীকে বাগে পেতে পুলিশকে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। শুক্রবার ‘শ্রীমান’ ধরা পড়লেও, এখনও স্পষ্ট হল না দুই স্কুল পড়ুয়াকে অপহরণ করে কেন খুন করা হল? খুনের মোটিভ নিয়ে কিছুতে নিঃসন্দিহান হতে পারছে না পুলিশ। ওই ঘটনার পিছনে আর কেউ রয়েছে কি না, তা-ও স্পষ্ট হয়নি। কেন? কারণ হিসাবে গোয়েন্দারা বলছেন, যে-ভাবে মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র একই কথা বার বার বলে চলেছে, তা থেকে মনে হতেই পারে যে, অন্য কেউ এর পিছনে রয়েছে, যাকে বা যাদের বাঁচাতে চাইছে সে।তদন্তকারীরা সত্যেন্দ্রের দু’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হলেও এখনও দুই কিশোরের এক জনের ফোনের সন্ধান পাননি গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জেরার মুখে সত্যেন্দ্র এখনও দাবি করছে, মোটরবাইক কেনার জন্য তাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল অতনু দে। সতেন্দ্র সেই টাকা ফেরত দিতে না-পারায় তাকে অপমান করা হয়। তাকে বিভিন্ন সময় ব্ল্যাকমেলিং করছিল অতনু। তাতেই মাথা গরম হয়ে যাওয়ায় খুনের ছক।
তদন্তকারীদের কথায়, জেরার মুখে সত্যেন্দ্র পেশাদারদের মতো আচরণ করছে। যে-ভাবে গ্রেফতারি এড়াতে পেশাদারি কায়দায় সে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিল, ঠিক সেই কায়দায় জেরায় সিআইডি-র তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করে চলছে ওই অভিযুক্ত। এক সিআইডি-কর্তা জানান, সব সম্ভাবনা খোলা রাখা হয়েছে। খুনের আগে এবং পরে সতেন্দ্র কার কার সঙ্গে কী ভাবে যোগাযোগ করেছিল, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে। তা জানতে পারলে নিশ্চিত হওয়া যাবে, এর পিছনে আর কেউ রয়েছে কি না বা কারও নির্দেশে সে ওই জোড়া খুন করেছে কি না।
বাগুইআটির দুই কিশোর অতনু দে ও অভিষেক নস্কর গত ২২ অগস্ট নিখোঁজ হয়। তাদের গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছিল সত্যেন্দ্র। প্রায় ১৩ দিন পরে বসিরহাট মর্গে দুই কিশোরের দেহ শনাক্ত হয়। প্রথমে ভাড়াটে খুনি-সহ চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার সকালে হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে পাকড়াও করা হয় সত্যেন্দ্রকে।
সতেন্দ্রকে জেরা করার পরে তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার দিন দু’টি দেহ ফেলে রেখে অভিযুক্তেরা চলে আসে কেষ্টপুরে। সেখানে খুনে ব্যবহার করা ভাড়ার গাড়ি ফেরত দেয় সত্যেন্দ্র। তার পরে বাকি অভিযুক্তদের টাকার জন্য সেখানে দাঁড়াতে বলে পালিয়ে যায় সে। একটি মোটরবাইক বুক করে সোজা সে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দিকে চলে যায়। পরে সে ফিরে এসে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকে। সিআইডি জানিয়েছে, ঘটনার দিন একটি নয়, দু’টি গাড়িতে ভাগ হয়ে অভিযুক্তেরা এসেছিল। যে-গাড়িটি আটক হয়েছে, সেটি ছাড়াও আরও একটি গাড়ি ভাড়া করা হয়। তার চালকের খোঁজ চলছে। তবে দ্বিতীয় গাড়িটির সন্ধান পেয়েছে সিআইডি।