হার মানল যন্ত্র, মানুষের ত্রাতা মানুষই, উত্তরকাশীতে মুক্ত ৪১ জন শ্রমিক

অবশেষে মুক্তি! যন্ত্র হার মানলেও ১৭ দিনের মাথায় হাতে মাটি খুঁড়েই এসেছে সাফল্য। ৪০০ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হল সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে। অবশেষে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন তাঁদের পরিজনেরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। জেনারেল ভিকে সিং। শ্রমিকদের উত্তরীয় পরিয়ে অভিন¨ন জানান তাঁরা। একেক জন শ্রমিককে বের করতে ৪-৫ মিনিট করে সময় লাগবে বলে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু উদ্ধারকাজ শুরু হতেই কাজ হল অত্যন্ত মসৃণভাবে। মাত্র ৩৮ মিনিট ২১ সেকেন্ডেই আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককেই উদ্ধার করা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রত্যেকটি শ্রমিকই শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছেন। যদিও তাঁদের গ্রিন চ্যানেল করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

 

এক শ্রমিককে উদ্ধার করতেই যেন উদ্ধারস্থলে শুরু হয়ে যাওয়া অকাল দিওয়ালি। ফাটতে শুরু করে বাজি। প্রচন্ড ঠান্ডায় পারদ পরতে থাকলেও উদ্ধার করতে আসা শ্রমিকদের উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে ক্রমশ।

গত ১২ নভেম্বর ভোরে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নামে। ভিতরে আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। এত দিন ধরে তাঁদের বার করার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছিল না কিছুতেই। খোঁড়ার সময়ে গত শুক্রবার বাধা আসে। ধ্বংসস্তূপের ভিতরের লোহার কাঠামোয় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যায় আমেরিকান খননযন্ত্র। উদ্ধারকাজ থমকে যায়। আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের বিষয়ে অনবরত খোঁজ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও। তিনি মুখ্যমন্ত্রী ধামীকে একাধিক বার ফোন করেছেন।

উদ্ধার করার আগে পর্যন্ত সুড়ঙ্গের শ্রমিকদের সঙ্গে প্রশাসনের তরফে অনবরত যোগাযোগ রাখা হয়েছিল। পাইপের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে কথা চলছিল। পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল খাবার, জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সুড়ঙ্গে থাকাকালীন উত্তরকাশীর শ্রমিকদের প্রথম ভিডিও প্রকাশ্যে আসে গত মঙ্গলবার। পাইপের মাধ্যমে ক্যামেরা পাঠান উদ্ধারকারীরা। সেখানেই দেখা যায় সুড়ঙ্গের ভিতর কী ভাবে, কী অবস্থায় তাঁরা রয়েছেন।

খননযন্ত্র ভেঙে যাওয়ায় দু’ভাবে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ নতুন করে শুরু হয়েছিল। খননযন্ত্রের সব টুকরোগুলি সুড়ঙ্গ থেকে বার করে আনার পর খনি শ্রমিকেরা সেখানে ঢুকে যন্ত্র ছাড়াই খোঁড়া শুরু করেন। ১০-১২ মিটার পথ সে ভাবেই খুঁড়ে ফেলার পরিকল্পনা ছিল। এই প্রক্রিয়াকে বলে ‘ইঁদুর-গর্ত’ প্রক্রিয়া। ইঁদুরের কায়দায় গর্ত খুঁড়ে সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিকদের বার করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ ছাড়া, সুড়ঙ্গের উপর দিক থেকে উল্লম্বভাবে খোঁড়ার কাজও শুরু হয়েছিল। ৮৬ মিটারের মধ্যে মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল ৪২ মিটার।

পর্যাপ্ত অ্যাম্বুল্যান্স, ওষুধপত্র আগে থেকেই শ্রমিকদের জন্য ঘটনাস্থলে মজুত করা হয়েছিল। প্রস্তুত রয়েছে অস্থায়ী হাসপাতালও। প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যবহার করা হবে। দরকার হলে অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁদের ঋষিকেশ এমসে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। ৪১ জনের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − eighteen =