আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় যুবককে ডেকে পাঠানো, তারপর অসুস্থ হয়ে মৃত্যু নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে বুধবারই কলেজ স্ট্রিট চত্বরে অবরোধ করেছিল মৃতের পরিচিতরা। এবার যুবকের রহস্যমৃত্যুর জল গড়াল আদালতে। পুলিশ মর্গে ময়নাতদন্ত চায় না মৃতের পরিবাপর। নিরপেক্ষ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত, গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফি ও থানায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। একই দাবি জানিয়েছে বিজেপিও। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে অযৌক্তিক জলঘোলা করা হচ্ছে বলে দাবি তৃণমূলের।
পুলিশের দাবি, বুধবার সন্ধেয় অশোক সাউ ওই যুবককে তার কেনা চোরাই মোবাইল ফোন থানায় এসে জমা দিতে বলা হয়েছিল। যুবক এসেওছিলেন। কিন্তু আচমকা তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতের পরিবারের অভিযোগ থানায় পুলিশের মারধরে যুবক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ও পরে মৃত্যু হয়েছিল। তবে পুলিশ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
এই ঘটনা ঘিরেই বুধবার সন্ধ্যায় উত্তাল হয় আমর্হাস্ট ßিT্রট এলাকা। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান মৃতের পরিবার। অভিযোগ সেই বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছিল বিজেপি নেতারা। বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ বুধবার সন্ধেয় বিক্ষোভস্থলে হাজির হন। দাবি করেন, থানার ভিতরে থাকা সিসিটিভি ফুজেট প্রকাশ্যে আনতে হবে। পরিবারকে সেই ফুটেজ দেখাতে হবে। তাঁর কথায়, এই ঘটনায় যেহেতু পুলিশ অভিযুক্ত তাই রাজ্য সরকারি বা রাজ্য সরকারের অধীনস্থ কোনও হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা চলবে না। কল্যাণী এইমস বা কমান্ড হাসপাতালে মতো কোনও নিরপেক্ষ স্থানে ময়নাতদন্ত করাতে হবে। গোটা প্রক্রিয়ায় ভিডিওগ্রাফি করানোর দাবিও জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের অ্যাডিশনাল সিপি (১) মুরলীধর শর্মা জানিয়েছিলেন, থানার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হবে। সেই সময় যাঁরা থানায় ছিলেন তাঁদের বয়ান নেওয়া হবে। এমনকী, ময়নাতদন্তর সময় ভিডিওগ্রাফির দাবিও মেনে নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্তের অনুরোধ জানাবে বলেও দাবি করেছিলেন পুলিশ কর্তা। এর মাঝেই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হল মৃতের পরিবার।
এদিকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর খোঁচা, তরাজ্য পুলিশের কাজকর্ম ক্রমশ খুব বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছে। সিপিএম আমলে পুলিশকে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন গোটাটাই পুলিশ করছে। তৃণমূল পার্টি বলে কিছু নেই। পুলিশ টাকা তুলে দিচ্ছে। বিরোধীদের ঠাণ্ডা করছে। ফলে তাদের উপর কোনও কন্ট্রোল নেই। যেখানে গণপ্রহারে লোক মরছে, সেখানে পুলিশের দেখা নেই। যেখানে গুলি চলছে, পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখছে। ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো হচ্ছে, পুলিশের কোনও অ্যাকশন নেই। আর এখানে, কার মোবাইল চুরি হয়েছে, কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই লোককে ডেকে, থানায় পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। পালটা তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের দাবি, কোনও ঘটনা ঘটলে প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে। যারা রাজনৈতিক লড়াইয়ে পেরে উঠছে না, তারা বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। যারা শকুনের রাজনীতি করে, তাঁরা এসব করছে।