নিজস্ব প্রতিবেদন, আমতলা: দক্ষিণ শহরতলির ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে অবস্থিত আমতলা গ্রামীণ হাসপাতাল। হাসপাতালের নতুন বহুতল তৈরির জন্য স্থানীয় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৎপরতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে অতি দ্রুততার সঙ্গে সম্প্রতি ৩৭ কোটি টাকার আর্থিক মঞ্জুরি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ভালো ভাবে পরিষেবা দেওয়ার জন্য ২০ জন অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে এই খবর জানা গিয়েছে।
হাসপাতাল সুপার ডা: রাহুল মিশ্র বলেন, ‘আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া গিয়েছে শীঘ্রই নতুন বিল্ডিং তৈরির কাজ শুরু হবে। এই হাসপাতালের সম্প্রসারণ খুবই জরুরি। কিন্তু জায়গার পরিসর খুবই অল্প। স্বাভাবিক কারণে এই হাসপাতাল সম্প্রসারণ কী ভাবে করা যাবে তা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’ এলাকার বিধায়ক মোহন চন্দ্র নস্কর আমতলা হাসপাতালের জমি স্বল্প পরিসরতার কথা কার্যত স্বীকার করে বলেন, ‘আমি বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানি। আমরা এই জমির অপ্রতুলতার কথা মাথায় রেখে বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে হাসপাতালকে অবিলম্বে মহকুমা হাসপাতালে পরিণত করার পথে অগ্রসর হয়েছি। আমি সুযোগ পেলেই আমাদের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব। অনুরোধ করবো যাতে এই হাসপাতাল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মহকুমা হাসপাতালের মর্যাদা পায় সেই জন্য উনি যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার।’
উল্লেখ্য, আজ থেকে বছর ৩৫ আগে বাম আমলে তৎকালীন সেচমন্ত্রী প্রভাস চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে এই আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালের পথচলা শুরু হয়। মাঝে ২০০৬ সালে বাম জমানায় এই হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তরিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু, তার পর আর এই বিষয়ে কোনও অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় বাম নেতৃত্বের।
তারপর সাতগাছিয়ার বর্তমান বিধায়ক মোহন চন্দ্র নস্করের উদ্যোগে সম্প্রতি এই হাসপাতালকে মহকুমা হাসপাতালে রূপান্তরিত করার জন্য একটা প্রস্তাব রোগী কল্যাণ সমিতিতে সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেল, সম্প্রতি ওই প্রস্তাবটি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসকের দপ্তর হয়ে স্বাস্থ্য ভবনে জমা পড়েছে। তারপরই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, রোগী কল্যাণ সমিতির ওই প্রস্তাব জমা হওয়ার পর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলাশাসক ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং সদর মহকুমা শাসক সহ একটি উচ্চ পর্যায়ের সরকারি আধিকারিকদের দল এই হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন। হাসপাতালের বর্তমান জীর্ণ ও ভঙ্গুর বিল্ডিং সহ সমস্ত পরিকাঠামোর বর্তমান অবস্থা তাঁরা সরজমিনে প্রত্যক্ষ করেন। এরপর তাঁরা এই হাসপাতালের বর্তমান বিল্ডিংটাই আদৌ রাখা হবে কিনা বা রাখলে তা কতটা মানুষের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত, তা পরীক্ষা করার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কাছে প্রস্তাব পাঠান।
সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞগণ এই হাসপাতালের পুরাতন প্রধান বিল্ডিংটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার জন্য সুপারিশ করেন। সেই সুপারিশ অনুসারে এই হাসপাতালের পুরাতন ভবন সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন ওই বিল্ডিংয়ের পরিবর্তে নবনির্মিত ট্রমা কেয়ার সেন্টারের বিল্ডিংয়ে অতি অল্প সংখ্যক বেড নিয়ে কোনও রকমে হাসপাতালের ইনডোর বিভাগ চালনা করা হচ্ছে। এলাকার মানুষজন অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছে, এই হাসপাতাল সম্প্রসারিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হওয়ারû জন্য।