‘ইনসাফের’ আশায় যৌবনের ডাকে মাঠ ভরল ব্রিগেডের , শুভেচ্ছাবার্তা বুদ্ধদেবের

৫০ দিনের ইনসাফ যাত্রার পর, রবিবার ছিল ব্রিগেড সমাবেশ। ‘যৌবনের ডাকে জনগণের ব্রিগেড’। তবে বামেদের ব্রিগেড মানেই আমাদের মানসপটে ভাষে গণসঙ্গীত দিয়ে তার সূচনা। তবে এবারের ব্রিগেড সভায় দেখা গেল নতুন চমক। সমাবেশের শুরুতে আপন করে নেওয়া হল কবিগুরুর এই গানকে। সমবেত গানে বাংলার সেই চিরাচরিত সুর। এই প্রসঙ্গে ডিওয়াইএফআই-এর তরফ থেকে জানানো হয়, ‘রবীন্দ্রনাথের গান তো কারও সম্পত্তি নয়। সেখানে গান গাওয়া নিয়ে আপত্তি কোথায়?’ ধর্মীয় বিভেদের সময় এই গান লিখেছেন কবিগুরু। আজকের দিনেও সেই প্রেক্ষাপট তাৎপর্যপূর্ণ।

এদিনের সভার শুরুতেই নজরে আসে চারভাগের তিনভাগ মাঠ দখল নিয়েছে জনতা। মঞ্চের সামনে তৈরি করা হয়েছে ভিআইপি গেট। কলকাতা পুলিশ চেষ্টা করছিল গোটা ভিড়টাকে ভিআইপি গেটের পাশ দিয়ে মাঠে ঢোকাতে। ফলে মঞ্চের সামনে এবং এক পাশে জমাট বাঁধছিল ভিড়। ফাঁকা ছিল মাঠের পিছন দিক, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কাছের অংশ।

ক্যাজুরিনা এভিনিউ বরাবর ব্যারিকেড দিয়ে বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের মাঠে ঢোকার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না বাইক মিছিলগুলিকে। কিন্তু বেলা ১টার কিছু পর থেকে পরিস্থিতি ঘুরতে শুরু করে। কার্যত ব্যারিকেড ভেঙে ব্রিগেডের দখল নিতে শুরু করে জনতা। শুরুতে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান বামপন্থীদের কর্মীরা। মৃদু ধাক্কাধাক্কিও হয়। কিন্তু ক্রমে ভিড়ের চাপ বাড়তে শুরু করায় পুলিশ রণে ভঙ্গ দেয়। ক্যাজুরিনা এভিনিউয়ের জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড মুক্তি হয়। এদিনের ব্রিগেডে ফোকাস পয়েন্টে ছিলেন মীনাক্ষী। আর সেই মীনাক্ষী-ই তাঁর বক্তব্য রাখতে উঠে বুঝিয়ে দিলেন দিকভ্রষ্ট প্রায় সব রাজনৈতিক দলই। মূল এজেন্ডা ছেড়ে নকল যুদ্ধ মেতেছে সবাই।

দেশের নাম ‘ইন্ডিয়া’ হবে না ‘ভারত’ হবে, সেই এজেন্ডা নয়, পোশাক নিয়ে বৈষম্যের এজেন্ডা নয়, কে কোন খাবার খাবে, সে সব নিয়েও নয়, সরাসরি প্রশ্ন তুলতে হবে কর্ম সংস্থান, রুটিরুজির মতো আসল এজেন্ডা নিয়ে। মাঠ-ময়দানের দখল নিতে হবে। দখল নেবে তাঁরাই, যাঁরা আসল এজেন্ডা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, কথা বলেন। ব্রিগেডের ময়দানে দলীয় কর্মী সমর্থকদের ভিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো গলায় এমনই বার্তা দিলেন বাম যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।

এরই পাশাপাশি এদিন ধর্ম নিয়ে রাজনীতির প্রশ্নে তাঁকে তুলোধনা করতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় শাসকদল বিজেপিকে। তবে দুর্নীতির প্রশ্নে রেয়াত করলেন না ‘ইন্ডিয়া’র শরিক তৃণমূলকেও। এদিন ডিওয়াইএফআই নেত্রী তাঁর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘যতদিন এই দেশের মানুষের জ্বালা যন্ত্রণা থাকবে ততদিন লড়াই করবে বামপন্থীরা। অতীতে অপশাসন, লুঠ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বামপন্থীরা লড়েছে। ২৯১০ কিলোমিটার হেঁটেছে বামপন্থীরা। কখনও শিক্ষার, দাবিতে কখনও হলদিয়া পেট্রো কেমিক্যাল, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বামপন্থীরা বারবার পথে নেমেছে। ইনসাফের লড়াই ধারাবাহিক। খেলা হবে বলেছিল। সেই মাঠ দখল করতে এসেছি, যেই ময়দানের লড়াইয়ের এজেন্ডা হবে না জাত, ধর্ম। লড়াইয়ের শর্ত হবে কাজ, রুটি, রুজি। সেই শর্ততে মাঠের দখল নেবে মূল এজেন্ডার কারিগররা।’

এদিনের মঞ্চ থেকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও। শুভেন্দুকে এদিন বিদ্ধ করে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতাকে, চ্যালেঞ্জ করছে বিধানসভার স্পিকারের কাছে দল বদল করা বিধায়কদের পদ খারিজ করার আবেদন করুন। হাওয়া টাইট হয়ে যাবে।  এরা বিধানসভার ভিতরে বিজেপি বাইরে তৃণমূল।’ তবে এদিন গোটা বত্তৃ«তাজুড়ে লোকসভা নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট করে কোনও দিকনির্দেশ বা বার্তা দিতে দেখা গেল না তাঁকে।

এদিনের ব্রিগেডে বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবু, তিনি রইলেন তাঁর শুভেচ্ছা বার্তায়। বার্তা পাঠালেন দু’লাইনের। তাতেও তিনি উদ্ধৃত করলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। ‘তাসের দেশ’-যে নাটক রবীন্দ্রনাথ উৎসর্গ করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে, সেই নাটকের গান থেকে উদ্ধৃত করেন বুদ্ধদেব। এই নাটকের অন্যতম জনপ্রিয় গান, ‘আমরা নূতন যৌবনেরই দূত’ গানের একেবারে শেষ লাইন, যেখানে ডাক পড়ে জীবন-মর-ঝড়ে আমরা প্রস্তুত,’ উদ্ধৃত করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, তিনি এই লাইনের মতো করে লিখলেন, ‘এটাই ডিওয়াইএফআই’। পাশাপাশি ব্রিগেড সমাবেশের সামগ্রিক সাফল্যও কামনা করেন তিনি। বুদ্ধদেববাবুর এই বার্তা সভার একেবারে শেষ অংশে পাঠ করে শোনান মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eight − five =