হাওড়া : রবিবার রাম নবমীর শোভাযাত্রায় ফজিরবাজার এলাকাতে বেশকিছু দুষ্কৃতী ইঁট বৃষ্টি করে। সেই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। রবিবারের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার হাওড়া ময়দানে বিক্ষোভ সভা করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ওই সভা করা কে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ফজিরবাজার থেকে হাওড়া ময়দান অব্দি এলাকা।
মুহুর্মুহ ইঁট বৃষ্টি থেকে শুরু করে দোকান ভাঙচুর করা হয়। গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। ওই এলাকার গলিগুলোতে প্রচুর সংখ্যায় হামলাকারী উপস্থিত থেকে বারংবার ভাঙচুরের কান্ড ঘটায়। ঘটনাস্থলে প্রচুর সংখ্যায় পুলিশ বাহিনী ও র্যা ফ মতায়ন করা হয়। গোলাবাড়ি, হাওড়া ও শিবপুর থানার পুলিশ কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
এদিন দোকানপাঠ সব বন্ধ ছিল। সমস্ত গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় অন্য পথে। গোটা এলাকায় পরিস্থিতি যথেষ্টই থমথমে ছিল। জমায়েতিদের-কে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পাশাপাশি এদিনের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের মেট্রো চ্যানেল থেকে তুলে নিয়ে আটক করে হাওড়া সিটি পুলিশ। তবে, ঘটনার পিছনে বেশ কিছু তথ্য স্পষ্ট উঠে আসছে। রবিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রামনবমীর শোভাযাত্রার আগাম খবর থাকলেও কেন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ?
ফজিরবাজার এলাকার যে ছাদগুলো থেকে ইঁট বৃষ্টি হতে পারে, তার আগাম খবর কেন পুলিশ পেল না ? এছাড়াও ওই ছাদে আগাম কেন নজরদারি রাখা হয়নি তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্বাঞ্চলের সম্পাদক অমিয়ূখ সরকার বলেন, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের যেখানে যেখানে এইভাবে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে এটাও তার সঙ্গেই সম্পর্কিত। এটা একটা জেহাদি প্যাটার্ন। তিনি আরও দাবি করে বলেন, যাদের ভারত মাতার জয়ধ্বনি, জয় শ্রীরাম ও বন্দেমাতরম ধ্বনিতে আপত্তি আছে তাদের এই দেশে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। আর এই জেহাদীদের বাইরে খোলা অবস্থায় ঘুরে-বেড়ানোর কোনো অধিকার নেই। প্রশাসন এদের গ্রেফতার করে জেলে ভরুক।
প্রসঙ্গত, রবিবার রামনবমী উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের হয় হাওড়ার বিভিন্ন প্রান্তে। শান্ত পরিবেশের মধ্যে সব শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হলেও তাল কেটেছিল হাওড়ার ফজিরবাজার এলাকায়। এরপরই পূর্ব পরিকল্পনা করে হাওড়ার ফজিরবাজার এলাকায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রামনবমীর শোভাযাত্রায় ইচ্ছাকৃত উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগ করে বিজেপি। এই ঘটনায় শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে বলে দাবি করা হয় বিজেপির তরফ থেকে। রবিবার বিকেলে রামনবমী শোভাযাত্রা ফজিরবাজার এলাকায় ঢুকলে শোভাযাত্রা-কে লক্ষ্য করে ইঁট বৃষ্টি করা হয়। দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া ইঁটের আঘাতে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনকারী একাধিক সদস্য আহত হয়। মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা।
ওই ঘটনায় একজন মহিলা গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। অপর এক সদস্যের মাথা ফেটে যায় ইঁটের আঘাতে। তাকে হাওড়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। রামনবমীর শোভাযাত্রা-কে কেন্দ্র করে যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষতিগ্রস্থ না হয় তার জন্য পরিস্থিতি কড়া হাতে মোকাবিলা করতে ওই এলাকার ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছিল হাওড়া সিটি পুলিশ। পাশাপাশি রবিবারের ইঁট ছোঁড়ার ঘটনার প্রতিবাদে ঘোষিত সোমবারের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যে পুনরায় এই ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে তার জন্য প্রশাসনের আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।