নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া: বাঁকুড়া জেলার মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর মানেই অলিতে গলিতে ইতিহাসের ছোঁয়া। ইতিহাস যেন সত্যিই ফিসফিস করে কথা বলে এই শহরের প্রত্যেকটা মহল্লায়। বিষ্ণুপুর লাল মাটির বাঁকুড়া জেলায় অবস্থিত এমন এক নগর যেখানে স্থাপত্য, ভাস্কর্য, শাস্ত্রীয় সংগীত এবং পাশ্চাত্যের এক অপরূপ মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায়। একটা সময় এই নগরে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন মল্ল রাজারা, তাঁদেরই ফেলে যাওয়া নিদর্শন দেখতেই তো ফি বছর পরিযায়ী পাখির মতো ভিড় জমান পর্যটকরা। মল্ল রাজাদের ফেলে যাওয়া নিদর্শন বলতে দলমাদল কামান, জোড়শ্রেণির মন্দির, বিষ্ণু মন্দির, গুম ঘর, লালবাঁধ আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে আপন মনে। শুধু তাই নয়, মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরে প্রবেশ করার সময় ফেলে আসতে হয় জয়পুরের ঘন সবুজ বনানী, তাও মন কাড়ে পর্যটকদের।
এই বছরও পর্যটকদের বিনোদন দিতে সেজে উঠেছে মল্লগড় বিষ্ণুপুর। তার ওপর বাড়তি পাওনা ঐতিহ্যবাহী বিষ্ণুপুর মেলা, গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে এই মেলার এবছর ৩৬তম বর্ষে পর্দাপণ, শুক্রবার পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন সারলেন এই মেলার। আর মেলার উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কার্যত চাঁদের হাট বসে গিয়েছিল মন্দিরনগরীতে, উপস্থিত ছিলেন একাধিক প্রশাসনিক কর্তা থেকে শুরু করে বিশিষ্ট অতিথিবর্গ। আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই মেলা। এই মেলায় নামী-দামি বিভিন্ন সংগীত শিল্পীদের সাংßৃñতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি থাকছে বিভিন্ন শিল্প প্রদর্শনী।
বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ জানান, ডিসেম্বর মাসের এই সময় থেকে শুরু করে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রচুর পর্যটক বিষ্ণুপুর, জয়পুরে আসবেন। যাতে তাঁদের কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে বাড়তি নজরদারি চালনো হবে। ট্যুর গাইডদেরও ইতিমধ্যেই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। এই পর্যটন মরসুমকে ঘিরে এখানকার সরকারি-বেসরকারি সব গেস্ট হাউস, হোটেলগুলি প্রায় বুকড এমনটাই জানাচ্ছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। এক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, বিষ্ণুপুরের পাশাপাশি জয়পুরেও তাঁদের হোটেলগুলিতে প্রচুর মানুষের সাড়া তারা পাচ্ছেন। সবাইকে রুম দেওয়া সম্ভবও হয়ে উঠছে না।
এখন মল্ল রাজারাও নেই, নেই তাঁদের রাজত্বও, শুধু পড়ে আছে তাঁদের ফেলে যাওয়া নিদর্শন। এইসব স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের টানেই তো অগণিত পর্যটকের পা পড়তে চলেছে মল্লগড় বিষ্ণুপুরে।