মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগকে উড়িয়ে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে পাল্টা অভিযোগপত্র শুভেন্দু অধিকারীর

বুধবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে পৌঁছল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিস্ফোরক অভিযোগপত্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগের দিনের তিন পাতার চিঠির প্রতিক্রিয়াতেই এই পত্র—কিন্তু তাতে শুধু পাল্টা যুক্তি নয়, শাসক দলের বিরুদ্ধে বহু গুরুতর বেআইনি কাজকর্মের অভিযোগও তুলে ধরলেন তিনি। নির্বাচনী পরিস্থতির উত্তাপ আরও বাড়াল এই চিঠি।

চিঠিতে শুভেন্দুর অভিযোগ, চলতি বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) প্রক্রিয়া আটকাতে মুখ্যমন্ত্রী পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতাকে খর্ব করার চেষ্টা করছেন। তাঁর দাবি, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য রক্ষায় অযোগ্য ও অবৈধ ভোটব্যাঙ্ককে ঢাল দিচ্ছেন, এবং এজন্যই এসআইআর নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।”

বিরোধী দলনেতার আরও অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে মুখ্যমন্ত্রী বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) ভয় দেখিয়ে কমিশনের নির্দেশ অমান্য করার পরোক্ষ বার্তা দিয়েছেন। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে উদ্দেশ্য করে “ভিত্তিহীন দুর্নীতির অভিযোগ” তোলা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে “রাজনৈতিক আনুগত্যের ইঙ্গিত”—এসবকেও শুভেন্দু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপর হামলা বলে উল্লেখ করেছেন।

শুভেন্দু চিঠিতে উল্লেখ করেন, এসআইআর কোনও “নতুন বা অভূতপূর্ব” প্রক্রিয়া নয়, স্বাধীনতার পর থেকেই একাধিকবার এই পর্যালোচনা হয়েছে। এমনকি ২০০২ সালের SIR–এর পর সংশোধিত ভোটার তালিকাতেই ২০০৪ সালে কলকাতা দক্ষিণ থেকে জয়ী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই—এই মন্তব্যে রাজনৈতিক বার্তাটি স্পষ্ট।

সবচেয়ে বিস্ফোরক অভিযোগটি অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘিরে। শুভেন্দুর দাবি, এসআইআর শুরু হতেই সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে হাজার হাজার বেআইনি বাংলাদেশি অভিবাসী পালাতে শুরু করেছেন—যাঁদের নাকি স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বছরের পর বছর ধরে জাল নথি পাইয়ে দেন এবং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। মৃত ভোটার, দ্বৈত-তিনবার নাম তোলার মতো অন্তত ১৩.২৫ লক্ষ সন্দেহজনক নামের তালিকাও তিনি কমিশনকে জমা দিয়েছেন বলে জানান।

চিঠিতে আরও উল্লেখ, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন বহু বুথে সিসিটিভি ক্যামেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ ছিল—যা তিনি “পরিকল্পিত কারচুপির জানালা” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। পাশাপাশি অভিযোগ তোলা হয়েছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে—বিএলও–দের অর্থপ্রদান আটকে রেখে কমিশনকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিপাকে ফেলার জন্য।

শুধু তাই নয়, মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়কে সামনে রেখে শুভেন্দুর তোপ—“তৃণমূল শুধু ভোট নয়, বিধায়কদেরও চুরি করে।”

চিঠির শেষাংশে নির্বাচন কমিশনের প্রতি তাঁর আবেদন—SIR যেন “নির্ভুল, নির্ভীক ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে” সম্পন্ন হয়। প্রয়োজনে অতিরিক্ত জনবল নামিয়ে ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণের কাজ সম্পূর্ণ করার অনুরোধ জানান তিনি।

বিধানসভা ভোটের আগে এমন অভিযোগপত্রে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে রাজনৈতিক উদ্বেগ। শাসক–বিরোধীর অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগে সরগরম রাজ্য রাজনীতি—এবার নজর নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 16 =