ফুটবল থেকে অবসর নিয়ে নিলেন সুব্রত পাল

এশিয়ান ফুটবলে একসময় ‘স্পাইডারম্যান’ বলা হত তাঁকে। বাইচুং ভুটিয়া, সুনীল ছেত্রীদের তারকাখচিত ভারতীয় টিমে মহাতারকা হয়ে উঠেছিলেন একসময়। গোলকিপার হলেও সারা দেশ তাঁকে চিনেছিল তিনকাঠির তলায় দুরন্ত পারফরম্যান্সের জন্য। সেই সুব্রত পাল অবসর নিলেন। মাঠে আপাত শান্ত সুব্রত কিপার হিসেবে খেলেছেন অসংখ্য স্মরণীয় ম্যাচ। মোহনবাগান থেকে উত্থান হলেও দেশের সেরা ক্লাবে খেলেছেন প্রায় দু’দশক ধরে। ইস্টবেঙ্গলে হয়ে খেলেছেন আই লিগে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগ শুরু হওয়ার পর বাংলার বাইরের টিমেই খেলেছেন বেশি। কেরিয়ারের শেষ দিকে ফিরেছেন ইস্টবেঙ্গলে। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তাঁকে ফিরিয়েছিল মোহনবাগান। তারপর আর তিনকাঠির তলায় দেখা যায়নি। বর্ণময় ফুটবল কেরিয়ারে অসংখ্য স্মরণীয় ম্যাচ উপহার দিয়েছেন। অবসর জীবনে পা দিয়ে কোচিংয়ের স্বপ্ন দেখছেন সোদপুরের মিষ্টু।

ভারতীয় ফুটবলের সোশ্যাল মিডিয়া সাইট X এ আজ, শুক্রবার সুব্রত পালের এক ছবি দিয়ে তাঁর অবসরের কথা জানানো হয়েছে। ইন্ডিয়ান ফুটবল টিমের টুইটারে সুব্রতর ছবির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘ধন্যবাদ স্পাইডারম্যান। ব্লু টাইগার্সের সুব্রত পাল আজ তাঁর গ্লাভসজোড়া তুলে রাখল।’
সুব্রতকে ঘিরে বিতর্কও কম হয়নি এক সময়। ২০০৫ সালে গোয়ায় ফেডারেশন কাপ খেলার সময় মারা গিয়েছিলেন ডেম্পোর ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার জুনিয়র। ওই ম্যাচে মোহনবাগানের কিপার সুব্রতর সঙ্গে বল দখলের সংঘর্ষে মাটিতে পড়ে যান ডেম্পোর বিদেশি। মারা যান জুনিয়র। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল সুব্রতকে। অন্ধকারময় সময় কাটিয়েছেন তখন। সেখান থেকে আবার আলোয় ফিরেছিলেন মিষ্টু। পারফরম্যান্স দিয়ে ভুলিয়ে দিতে পেরেছিলেন অতীত। কমেন্ট্রি করেন এখন। কোচিং কোর্সও করে ফেলেছেন। ফুটবল মাঠে এ বার কোচ ভূমিকায় নিজেকে দেখতে চান সুব্রত।

কলকাতার সোদপুরের সুব্রত পাল ভারতের হয়ে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক গ্রুপে খেলেছেন। অনূর্ধ্ব-২৩ থেকে শুরু করে সিনিয়র দলেও তিনি ছাপ রেখেছিলেন। ২০০৭ সালে নেহেরু কাপ, ২০০৮ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ, ২০০৯ সালের নেহেরু কাপ, ২০১১ সালের এএফসি এশিয়ান কাপ, ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার এবং ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সুব্রত। জাতীয় দলের হয়ে মোট ৬৭টি ম্যাচ খেলেছেন সুব্রত। আইলিগ, আইএসএলেও খেলেছেন সুব্রত পাল। ২০২১-২২ মরসুমে শেষ বার ইস্টবেঙ্গল থেকে সুব্রত পালকে লোনে নিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। ৩৬ বছর বয়সী গোলকিপার সুব্রত পাল দীর্ঘদিন ময়দানে নামেননি। এ বার পুরোপুরি ফুটবলকে বিদায় জানালেন।

পিয়ারলেস, ইউনাইটেড স্টুডেন্টের হয়ে কলকাতা ময়দানে প্রথম দেখা গিয়েছিল কিপার সুব্রত পালকে। সোদপুরের ডাকাবুকো ছেলে যে একদিন কিংবদন্তি গোলকিপার হতে পারেন, কেউ হয়তো ভাবেওনি। ২০০০ সালে টিএফএর ট্রায়াল চলছিল। ভারতীয় ফুটবলে তারকা তুলে আনার কাজ তখন সযত্নে করত টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি। সেখানেই ট্রায়ালে সুযোগ পেয়ে যান মিষ্টু। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। টিএফএ থেকে বেরিয়ে এসে ২০০৪ সালে সোজা সই করেন মোহনবাগানে। তখন কোচ অমল দত্ত। যাঁর হাত ধরে ময়দানে জন্ম নিয়েছে একের পর এক গোলকিপার। সেই অমল আলোয় সুব্রত নিজেকে চেনাতে পেরেছিলেন। ২০ বছর পর যখন অবসরের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তখন কুর্নিশ করছে ভারতীয় ফুটবল মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − 11 =