পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত একাধিক, জখম অন্তত ২০; শাহকে ফোন মোদির – শ্রীনগরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন এবং বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে নিরাপত্তাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে।

বৈসরন উপত্যকায় হামলা

মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। নিরাপত্তাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পুলিশ সূত্রে খবর, জঙ্গিরা রাজস্থান থেকে আসা পর্যটকদের উপর হামলা চালায়। হামলায় কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিরাপত্তাবাহিনী এলাকা ঘিরে ফেলে এবং তল্লাশি শুরু করে। শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

মোদির ফোন, শাহকে দ্রুত কাশ্মীরে যাওয়ার নির্দেশ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি বর্তমানে সৌদি আরবের জেদ্দায় রয়েছেন, ওই সময় ঘটনাটি জানার পর অমিত শাহের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। মোদি সব ধরনের জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শাহকে নির্দেশ দেন এবং শ্রীনগরে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার কথা বলেন। সেই নির্দেশের পর, অমিত শাহ দিল্লিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন এবং সন্ধ্যা শ্রীনগরের গিয়ে সেনার আধিকারিক দের সাথে কথা বললেন।

অমিত শাহের প্রতিক্রিয়া

অমিত শাহ সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে জানান, “পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় আমি অত্যন্ত ব্যথিত। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তারা কোনোভাবেই পার পাবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী আমায় ফোন করেছিলেন এবং আমরা ভিডিও কনফারেন্সে আলোচনা করেছি। শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছি এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে পর্যালোচনামূলক বৈঠক করব।”

এলাকার পরিস্থিতি এবং শোক প্রকাশ

ঘটনার পরই জম্মু-কাশ্মীরের উপ-রাজ্যপাল মনোজ সিনহা এবং মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা সোশাল মিডিয়ায় হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহেবুবা মুফতিও এই হামলার কঠোর সমালোচনা করেন। আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা প্রদান করার জন্য উপ-রাজ্যপাল স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই কাপুরুষোচিত হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শাস্তি হবে অপরাধীদের।”

পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবা দায়ী

হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার শাখা সংগঠন। এই হামলার পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী আক্রমণকারীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে, তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

ভবিষ্যৎ অমরনাথ যাত্রা এবং নিরাপত্তা উদ্বেগ

আগামী ৩ জুলাই থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হবে, যেখানে বিপুল সংখ্যক পুণ্যার্থী জম্মু-কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে আসবেন। এর মধ্যে এই জঙ্গি হামলার ঘটনা উপত্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে। গত এপ্রিল মাসেও কিশতওয়ারে পাকিস্তানি জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় সেনার এক সদস্য শহিদ হন।

উপত্যকার চলমান নিরাপত্তা অভিযান

এদিকে, নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে তৎপর রয়েছে। গত মার্চে, কাঠুয়ার সানিয়াল গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুটি জঙ্গিকে খতম করা হয়। প্রতিদিনই জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি নিকেশ অভিযান চলছে।

এটি এক বৃহৎ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সংকেত, যা অমরনাথ যাত্রার আগে আরও বাড়িয়ে দেবে।

স্বামীকে আগেই মেরেছে জঙ্গিরা। “আমাকেও মারো”, চিৎকার করে উঠেছিলেন মহিলা। কিন্তু তাঁকে না মেরে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ক্রুর স্বরে জঙ্গিরা বলল, “তোমাকে মারব না। তোমার স্বামীকে মেরেছি। যাও গিয়ে মোদিকে বলো।” বিভীষিকার কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন মহিলা। একটি নয়, পহেলগাঁও হামলার পর এমন বেশ কয়েকটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ঘুরছে। সেই কান্না, হাহাকার আর নৃশংসতা, যে কোনও সুস্থ ব্যক্তিকে বিচলিত করে দিতে বাধ্য। বেসরকারি হিসাব বলছে, পহেলগাঁও হামলায় অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। এখনও বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি। পহেলগাঁওয়ে রীতিমতো ধর্মীয় পরিচয় দেখে দেখে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। স্থানীয় সূত্রের দাবি, জঙ্গিরা এসেছিল সেনার পোশাক পরে। সব মিলিয়ে ৪০ রাউন্ড গুলি চলেছে। মূলত আক্রমণ করা হয় অমুসলিমদের। ঘটনায় রীতিমতো তছনছ হয়ে গিয়েছে পেহেলগাঁওয়ের ওই বিখ্যাত রিসর্টটি। গোটা পরিস্থিতি নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 + ten =