খড়্গপুর আইআইটিতে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ আদালতের

আইআইটি খড়গপুর ছাত্রের রহস্য মৃত্যুতে বিস্ফোরক রিপোর্ট আদালতে জমা পড়তেই ছাত্রের দেহ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। আদালত সূত্রে খবর, মঙ্গলবার খড়্গপুর আইআইটি-র ছাত্র ফাইজন আহমেদের মৃত্যুতে রিপোর্ট জমা দেয় হাইকোর্ট নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি। চিকিৎসক অজয় গুপ্তর দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই ছাত্রের মাথার পিছনে ভারী কিছু বস্তু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এদিকে পুলিশের ময়না তদন্তের রিপোর্টে এই ঘটনার উল্লেখ নেই। বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টে এও উল্লেখ রয়েছে যে, হাত কেটে দিয়ে আত্মহত্যার দিকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে। এরই পাশাপাশি রিপোর্টে নতুন করে দেহ তুলে নতুন করে ময়নাতদন্তের সুপারিশও করে বিশেষজ্ঞ কমিটি। রিপোর্টে কমিটি এ প্রশ্নও তোলে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কীভাবে ভারী বস্তুর আঘাতের কথা উল্লেখ না থাকতে পারে তা নিয়েও। কারণ মাথার পিছনে ‘হেমাটোমা’ অর্থাৎ রক্ত জমাটের চিহ্ন স্পষ্ট। অথচ, এই ‘হেমাটোমা’-র কোনও উল্লেখ-ই নেই। অর্থাৎ এর থেকে স্পষ্ট , ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ঠিক নেই।
বিচারপতি মান্থা এরপরই মন্তব্য করেন, ত্রুটিপূর্ণ ময়নাতদন্ত হয়েছে। তাই দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে। আর সেই কারণেই দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য সেই ছাত্রের দেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেন বিচারপতি। সেই সঙ্গে তদন্তকারী অফিসারকে তিনি আরও নির্দেশ দেন, নতুন করে ময়নাতদন্ত করার জন্য দেহ কলকাতায় আনতে হবে। চিকিৎসক গুপ্ত এবং আগের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক থাকবেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে হবে ময়না তদন্ত। এই সব ব্যবস্থা করবে রাজ্য। আগামী এক মাসের মধ্যে ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দে বিচারপতি মান্থা।
এদিকে এদিন রাজ্যের আইনজীবী সন্দীপ ভট্টাচার্য মঙ্গলবার আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দেওয়া ২০২২ সালের ২১ নভেম্বরের রিপোর্ট অনুযায়ী, আইও অর্থাৎ তদন্তকারী অফিসার কিছু ওষুধ উদ্ধার করেন। সেই ওষুধগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই ওষুধগুলো মূলত মাংস যাতে পচে না যায়, তার জন্য ব্যবহার হয়। বিষ হিসেবে ব্যবহার হয়। আদালত সূত্রে খবর, আগামী ৩০ জুন মামলার পরবর্তী শুনানি।
প্রসঙ্গত, গত বছর ১৪ অক্টোবর খড়্গপুর আইআইটি-র হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় অসমের বাসিন্দা ফাইজ়ানের ঝুলন্ত দেহ। তিনি বি-টেক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ফাইজ়ানের পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে খুন করা হয়েছে। এদিকে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের বক্তব্য ছিল অন্য। তাদের বক্তব্য ছিল, চাকরি না পেয়ে মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী হয়েছিলেন ছাত্র। সেই দাবি অবশ্য মানেনি পরিবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − twelve =